হাফেজ হেলালুদ্দীন খালভী :: কক্সবাজার জেলার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, টেকনাফ আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া (বড় মাদ্রাসা) ও ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার কক্সবাজার এর সুদক্ষ মুহতামিম ও প্রধান মুফতি, প্রখ্যাত শিকড়সন্ধানী আলেমেদ্বীন, হযরত মাওলানা মুফতি কিফায়তুল্লাহ শফিক সাহেব দামত বারকাতুহুম বরাবরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত, নারী-পুরুষ মিশ্রিত একটি অস্বাভাবিক জানাযা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ধারণা মতে দৃশ্যমান আকারে পুরুষদের সাথে মিলেমিশে কোন নামায পড়ার অনুমতি ইসলাম ধর্মে নাই। তবে পুরুষগণের পিছনে ভিন্ন কাতারে কোন কারণে তারা দাঁড়িয়েগেলে তাদের নামাযও হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অভিজ্ঞ ওলামা-ই-কিরাম।
এবিষয়ে তার বরাবরে দেওবন্দী আদর্শের আলেমগণের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেওবন্দী আলেমগণের ফতওয়া হলো জানাযার নামায পুরুষগণেই পড়বেন, মহিলাগণের জানাযায় অংশগ্রহণ করা সমূহ কারণে সম্পূর্ণ অনুচিৎ। তবে যদি মহিলাগণ পুরুষগণের পিছনের কাতারে ভিন্নভাবে দাঁড়িয়ে যায় তাদের নামাযও হয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়িশা রা. সহ অন্যান্য আম্মাজানগণের কোন কোন জানাযায় অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিজ্ঞ আলেমেদ্বীন আল্লামা মুফতি কিফায়তুল্লাহ শফিক সাহেব দামত বরকাতুহুম বলেন, সারা জীবনের মাত্র দু’একটি ঘটনা দ্বারা উম্মতের জন্য কোন আমল নিয়মিত সুন্নাত প্রমাণিত হয়না বিধায় সোনালী যুগ থেকেই এই পর্যন্ত সর্বস্তরের নারীগণ এ আমল থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন।
দুই হারাম শরীফে মহিলাগণকে জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ করতে দেখাগেছে। ভারতবর্ষে তার প্রচলন নাই কেন জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, হারামাইন শরীফাইনে হজ্ব-ওমরাহ পালনকারী মহিলাগণ জানাযায় অংশগ্রহণ করতে আসে না। ফরয নামাযের সুবাধে উপস্থিত আছেন বিধায় জানাযাও আদায় করে থাকেন। তাও তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের অনুবলে পড়া হয়। কোন আলেমের পরামর্শক্রমে পড়া হয় বলে মনে হয় না।
মুফতি কিফায়তুল্লাহ শফিক সাহেব দামত বরকাতুহুম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন, মুসনাদে আহমদ ও সহীহ ইবনে খুযায়মাহ গ্রন্থে হযরত উম্মে হুমায়দ রা. সূত্রে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহ তা’আলার রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, ”আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর, অথচ তোমার জন্য তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়ার চেয়ে তোমার একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম। আর তোমার বসবাসের গৃহে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদ তথা মদিনার হারাম শরীফে নামায পড়ার চেয়ে।” তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার গৃহের কোণে একটি রূম তৈরী করতে। তাঁরই নির্দেশক্রমে গৃহের কোণে রূম বানানো হলো এবং সেটিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলা হল। সেখানে তিনি মরণ পর্যন্ত নামায পড়তেন।
উপরোক্ত সহীহ হাদীস শরীফের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, যেখানে মুসলিম রমণীদের সার্বিক নিরাপত্তার পাশাপাশি পুরুষগণের নামাযের হিফাযতের স্বার্থে মানবতার নবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদিনার হারাম শরীফে সৃষ্টির সেরা নবীকুল শিরমণী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর ইমামতিতে ফরয নামাযে (যা সকলের পড়তে হয়) উপস্থিতির ব্যাপারে নিরোৎসাহিত করেছেন সেখানে মহিলাদের জানাযার নামাযে (যা ফরযে কিফায়াহ সকলের পড়তে হয়না) অংশগ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। কারণ, নামায একটি নিছক ইবাদত। ইবাদত করা হয় ছাওয়াবের আশায়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর ফতওয়া মতে বাইরে নামায পড়ার চেয়ে ঘরের ভিতরে যদি ছাওয়াব বেশি হয় তারা নামায আদায়ের জন্য বাইরে যাবে কেন? অথচ সহীহ হাদীস শরীফে মুসলিম রমণীদেরকে কবরস্থান গমন ও মায়্যিতের পিছনে পিছনে চলাকেও স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
এই জন্য অভিজ্ঞ আলেমগণ ফতওয়া প্রদান করেছেন যে, মুসলিম রমণীদের জন্য জানাযার নামাযে অংশগ্রহণ না করাই উত্তম ও নিরাপদ। এটাই মুসলিম উম্মাহ’র ধারাবাহিক আমল। যার বিপরীত করা কোনভাবেই কাম্য নয়।
সবশেষে ইসলাম ধর্মে জানাযার নামাযের গুরুত্বের ব্যাপারে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে মুফতি কিফায়তুল্লাহ শফিক সাহেব দামত বরকাতুহুম বলেন, সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত ইবনে আব্বাস রা. সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন মুসলমানের জানাযা নামাযে ৪০ জন শিরিকমুক্ত পুরুষ মাগফিরাত কামনা করলে তাদের সুপারিশ নিশ্চিত গৃহীত হয়”।
এতে করে বুঝা যায় মুসল্লিদের পাশাপাশি মায়্যিতের জন্যও জানাযার নামায একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ আমল। যে আমল দ্বারা একজন পাপিষ্ট মুসলমানের নাজাতের সিদ্ধান্ত হয়। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত পালনকালে পুরুষদের মাঝে নারী ঢুকিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে উভয়ের নামায নষ্ট করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা সকলের জন্য আবশ্যক।
মহান আল্লাহ তা’আলা সকল মুসলমানকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেওয়ার তাওফীক দান করুক। আমীন।
উপস্থাপনায়
হফেজ হেলালুদ্দীন খালভী
সিনিয়র শিক্ষক,
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া টেকনাফ,
কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
তারিখ : ৪ ঠা শাওয়াল ১৪৪৪ হিজরী
মুতাবিক ২৫ ই এপ্রিল ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ