‘কী অভূতপূর্ব কথা!’
‘এক টাকা কি এক লক্ষ টাকা থেকে বেশি হতে পারে?’
‘হ্যাঁ, সত্যিই হতে পারে-
যদি থাকে মহান আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ আস্থা, অবিচল বিশ্বাস ও তাঁর প্রতি প্রকৃত প্রেম-ভালবাসা।’
‘কীভাবে?’
নাসাঈ শরীফ, ইবনে হাব্বান, ইবনে খুযায়মাহ্, হাকিম, ও ‘সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব লিল-আলবানী’-সহ নির্ভরযোগ্য হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তির প্রচুর সম্পদ আছে। সে তার বিপুল সম্পদ থেকে এক লাখ টাকা সদ্কা করল এবং আরেক ব্যক্তির শুধু দু’ টাকা আছে; তা থেকে সে এক টাকা সদকা করে দিল। শেষোক্ত ব্যক্তির এক টাকার দানের ছাওয়াব প্রথমোক্ত ব্যক্তির এক লাখ টাকার দানের ছাওয়াবের চেয়েও বেশি।
মানে হচ্ছে, সম্পদশালী ব্যক্তি যার বিপুল বিত্ত-বৈভব রয়েছে, তার অঢেল ধন-সম্পদ থেকে এক লক্ষ টাকা সদ্কা করা বাহ্যিক দৃষ্টিতে পরিমাণে বেশি হলেও কিন্তু সাধারণ ব্যক্তি যার প্রচুর সহায়-সম্পদ নেই; কেবল আবশ্যিক জীবিকা নির্বাহের পর দু’টাকা বেঁচে থাকল, অথচ সে বেচারা গরীব তার দু’ টাকা থেকে এক টাকা আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিল, নিশ্চয় পরিমাণে স্বল্প হলেও তার এ দান ওই সম্পদশালীর দানের চেয়ে সহস্র গুণ বেশি মূল্যায়নযোগ্য। কারণ, সে তার অর্ধেক সম্পদ দান করে দিল, আর ওই বিত্তবান ব্যক্তির এক লাখ টাকার দান তার বিশাল সম্পদ অনুপাতে কিঞ্ছিত মাত্র।
দান-সদকা। শুধু মানুষেরই লাভ। পৌঁছে একের হাত থেকে অপরের হাতে। যার কিছুই পৌঁছে না আল্লাহ্ পাকের কাছে। তিনি তো অমুখাপেক্ষী। ধন-সম্পদ, টাকা-পয়সা কোন কিছুরই তাঁর প্রয়োজন নেই। তিনিই সবকিছুর স্রষ্টা ও সর্বদাতা। তিনি রহমান। তিনি রহীম।
আসলে!
অল্লাহ পাক ধন দিয়ে মন চান। ধন-সম্পদ খুবই মনোমুগ্ধকর, চিত্তাকর্ষক ও অতি লোভনীয় বস্তু। যে যত পায় সে আরো চায়। উদরপূর্তি তার কখনো হয় না। সর্বক্ষণ অপরিতৃপ্তিই তার ভাগ্যে জুটে। রাক্ষুসে ও লোভাতুর হয়ে ভক্ষণ করতে চায় সব কিছু। কার্পণ্য তার পিছু ছাড়ে না। মারামারি, খুন-খারাবি, রাহাজানি, লুটতরাজসহ অপরাপর অপরাধ জগতে প্রায় সব অনিষ্টের পিছনে অনেকাংশে এই ধন-সম্পদই দায়ী। এই জন্যেই তো ধন-সম্পদ বান্দাহ’র জন্য পরীক্ষা স্বরূপ। যে ধন-সম্পদ নিজ ক্ষমতা ও অধিকার বলে অর্জন করে নাই; পাপ-পঙ্কিলযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও কেবল আল্লাহ তা’আলা ফজল ও মেহেরবানী করে দান করেছেন, সেই ধন-সম্পদের মোহে আচ্ছন্ন না হয়ে আল্লাহর রাস্তায় ও অভাবী প্রয়োজনমুখী দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত মানবের তরে সাধ্য মত দান-দক্ষিণার হাত বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহর দেয়া ধন-সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দেয়, না মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে। এ কারনেই দান-সদকা অতি মহৎ ও বড় কাজ। এর প্রতিদানও এতোই বিস্তৃত যে, পরিশুদ্ধ নিয়্যতে করা বান্দাহ’র তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর দান মহান আল্লাহ বৃদ্ধি-প্রবৃদ্ধি করে এমনভাবে সম্প্রসারিত করেন, যা বৃহদাকার পাহাড়সম নেকীর স্তুপে পরিণতি পায়।
‘সুবহানাল্লাহ! আল্লাহু আকবার!!’
‘কতো বড় কামাই!’
‘কতো বড় সওদা!’
বুঝা গেল, দান-সদকা মানে ধন-রত্ন কমে গিয়ে ক্ষতি সাধিত হওয়া নয়; বরং অনন্ত-অনাদি পরকালের জন্য নেকীর বীজ বপন করা। যা হতে অঙ্কুরিত বটবৃক্ষ সেই দানবীর বান্দাহ’র জন্য স্বয়ং আল্লাহ পাকের কুদরতী নিখুঁত পরিচর্যায় পত্র-পল্লবে ডাল-পালায় ফলে-মূলে সুবিকশিত ও সুশোভিত হতে থাকবে। আর বান্দাহ্ ইহধাম ছেড়ে ওপাড়ে পাড়ি জমালেই উপভোগ করতে পারবে যার সুফল। অধিকন্তু মহান আল্লাহ পাকের অঙ্গীকারানুযায়ী সদ্কার কারনে দুনিয়াতে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পায় আর নবীকণ্ঠের ঘোষণা মতে, সদকার কারণে মহান আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত হয়, সমূহ বিপদাপদ দূরীভূত হয় সাথে সাথে অপমৃত্যুও রোধ হয়। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে বেশি বেশি দান-খয়রাত করে উভয় জগতের সফলতা লাভ করার তাওফীক দান করুক-আমীন।
এবার দেখুন প্রিয় নবীজির (সা.) হাদীস শরীফ-
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِـيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ، سَبَقَ دِرْهَمٌ مِائَةَ أَلْفٍ قَالُوْا : يَا رَسُوْلَ اللهِ، وَكَيْفَ؟ قَالَ: رَجُلٌ لَه دِرْهَـمَانِ فَأَخَذَ أَحَدَهُـمَا فَتَصَدَّقَ بِه، وَ رَجُلٌ لَه مَالٌ كَثِيْـرٌ فَأَخَذَ مِنْ عُرْضِ مَالِه مِائَةَ أَلْفٍ، فَتَصَدَّقَ بـِهَا.
(رواه النسائى ۳۲/۲ برقم ۲۸۰۷ وابن حبان ۱۳۵/۸ وابن خزيمة ۹۹/۴ و الحاكم ۹۱۶/۱ وصحيح الترغيب والترهيب للألباني ص-۳۷۰)
অনুবাদ : হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত : আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এক দিরহাম এক লক্ষ দিরহাম-এর উপর প্রাধান্য নিয়ে গেছে। সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সা.! সেটা কীভাবে? তিনি বললেন, এক ব্যক্তির শুধুমাত্র দু’ টি দিরহামই রয়েছে, সেখান থেকে সে একটি দিরহাম নিল এবং সদকা করে দিল। আর এক ব্যক্তির অগণিত মাল রয়েছে, সেখান থেকে সে এক লক্ষ দিরহাম নিল এবং দান করে দিল।”
(নাসাঈ শরীফ : ২/৩২, হাঃ ২৩০৭, ইবনে হাব্বান : ৮/১৩৫, ইবনে খুযায়মাহ্ : ৪/৯৯, হাকিম : ১/৪১৬, সাহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব লিল-আলবানী : পৃ: ৩৭০)
ـــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــــ
সংগৃহীত: নেকীর পাহাড়, পৃ. ১১২-১১৪,
সংকলক,
মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ কিফায়তুল্লাহ শফিক,
মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস,
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া টেকনাফ,
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার কক্সবাজার, বাংলাদেশ৷