বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
সাধারণত অধিকাংশ মুসলমান সত্তরগুণ ছাওয়াব পাওয়ার আশায় পবিত্র রমাযান মাসেই যাকাত আদায় করে থাকেন। আল্লাহ তা’আলার মেহেরবানিতে আপনি আমার এই ক্ষুদ্র লেখাটি পড়লে স্বীয় সম্পদের যাকাত কিভাবে আদায় করতে হয় জানতে পারবেন ইনশাআল্লাহু তা’আলা। দ্বীনি জ্ঞান প্রচারের নিয়্যতে যথাযথ শেয়ার করার অনুরোধ রইল।
* যাকাত আস্বীকারকারী কাফির। (সূরা হামীম সাজদাহ : ৬-৭)
* যে ব্যক্তি যাকাত আদায় করে না ক্বিয়ামত দিবসে তাকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে। (সূরা তাওবাহ : ৩৪-৩৫)
* যে জাতি যাকাত আদায় করে না, তারা দুনিয়াতে দুর্ভিক্ষে পতিত হবে। (তবরানী শরীফ)
* যাকাত আদায়কারী ক্বিয়ামত দিবসে সর্বপ্রকারের ভয় থেকে নিরাপদ থাকবে। (সূরা বাকারা : ২৭৭)
* যাকাত আদায় করা, গুনাহের কাফফারা ও মর্যাদা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম। (সূরা তাওবাহ : ১০৩)
* যাকাত মুসলমানকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে। (সূরা তাওবাহ : ১০৩)
যাকাতের হুকুম : প্রত্যেক সম্পদশালী মুসলমান পুরুষ হোক বা মহিলা উভয়ের উপর যাকাত ফরয। বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন সকলের উপর যাকাত আদায় করা ফরয। যদি তারা নিসাবের মালিক হয়। যাকাত ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম। কুরআন শরীফে নামাযের সাথে প্রায় ৩২ বার যাকাত এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নামায আল্লাহ তা’আলার শারিরিক ইবাদত, যাকাত হচ্ছে আর্থিক ইবাদত। যাকাত আদায় করা যেমন ফরয তেমনিভাবে যাচাই-বাচাই করে উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেওয়াও ফরয। কোন অযোগ্য ব্যক্তিকে যাকাত দিলে ফরয আদায় হবে না।
নোট : সুদ, ঘুষ, ডাকাতি এবং সকল অবৈধ পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান করলে তার কোন কল্যাণ বয়ে আনবে না। শুধুমাত্র হালাল পন্থায় উপার্জিত সম্পদ থেকে যাকাত প্রদান করলেই তা আল্লাহর দরবারে কবূল হবে।
প্রশ্ন : কতটি বস্তুর উপর যাকাত ফরয?
উত্তর : আটটি বস্তুর উপর যাকাত ফরয। ১। স্বর্ণ-রূপা, ২। যমীনের উৎপাদিত ফসল ৩। ব্যবসায়িক পণ্য ৪। চতুষ্পদ জন্তু। ৫। ফ্ল্যাট-প্লট ৬। ভাড়া বাসা, ভাড়া-বিল্ডিং ৭। গাড়ি ৮। দোকান ইত্যাদি।
স্বর্ণের যাকাত : সাড়ে সাত তোলা (৮৭.৪৮ গ্রাম প্রাধান্য পাওয়া মত অনুসারে) স্বর্ণের উপর যাকাত ফরয হয়। (শুধু স্বর্ণ থাকলে) (ইবনে মাজাহ শরীফ : ১/১৪৪৮)
নোট : স্বর্ণ-রূপা সংরক্ষিত হোক বা ব্যবহারের হোক। উভয়ের উপর যাকাত ফরয। (আবূ দাউদ শরীফ : হা. ১৫৬৫, মুসতাদরকে হাকিম : ১/৩৯০, ফাতহুলবারী : ৪/১৩)
রূপার যাকাত : সাড়ে বায়ান্ন তোলা (৬১২.৩০ গ্রাম প্রাধান্য পাওয়া মত অনুসারে) রূপার উপর যাকাত ফরয হয় (শুধু রূপা থাকলে)। এর চেয়ে কমের উপর যাকাত ফরয হয় না।
নগদ টাকার যাকাত : সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা সমপরিমাণ টাকা ঋণ ও অতিপ্রয়োজনীয় বস্তু ইত্যাদি ব্যতীত একবছর ব্যাপী জমা থাকলে উক্ত টাকার যাকাত দেওয়া ফরয। চলতি ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে যাকাতের সর্বনি¤œ নিসাব বা পরিমাণ সাব্যস্ত হয়েছে, ৫৫০৭২ টাকা মাত্র।
যাকাত আদায়ের বর্ণনা : সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ কিংবা তৎমূল্যের শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হয়। (বুখারী শরীফ)
যমীনের উৎপাদিত ফসলের যাকাত : নিজের ব্যবস্থাপনায় পৌঁছানো পানি দ্বারা উৎপাদিত যমীনের ফসল যদি পাঁচ ওয়াসাক তথা ৭২৫ কিলোগ্রাম অর্থাৎ ১৮মণ থেকে বেশি হয়, তাহলে উৎপাদিত ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাতরূপে দিতে হয়। অন্যথায় নয়।
আর যদি ফসল কুদরতি পানি দ্বারা উৎপন্ন হয়, তাহলে উৎপাদিত ফসলের দশভাগের একভাগ যাকাতরূপে দিতে হয়। (বুখারী শরীফ, যাকাত অধ্যায়)
বাসা-বাড়ির যাকাত : বাসা-বাড়ির উপর যাকাত নেই। তবে যদি বাসা-বাড়ির ভাড়ার টাকা পুরো বছর জমা হয়ে নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে এবং তারইর উপর এক বছরও পূর্ণ হয় তখন জমানো ভাড়ার উপর যাকাত ফরয। যদি বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে ঐ টাকা খরচ হয়ে যায় তাহলে যাকাত ফরয হবে না।
গাড়ির যাকাত : ব্যবহারের গাড়ি ও ভাড়ায় চালিত গাড়ির উপর যাকাত আসে না। তবে গাড়ির ভাড়ার টাকা (আয়) যদি নিসাব পরিমাণ জমা হয়ে এক বছর পূর্ণ হয়, তাহলে উক্ত টাকার উপর যাকাত আসবে। ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত গাড়ির মূল্যের উপর যাকাত অবশ্যই ফরয।
নোট : ব্যক্তিগত ব্যবহারিক গাড়ি, জন্তু, নিরাপত্তার জন্য রক্ষিত হাতিয়ার, বসবাসের বাড়ি ও ব্যবসার জন্য নয় এমন জমিজমার যাকাত ফরয নয়। আয়ের উপকরণ যেমন মিল কারখানা, দোকান, যন্ত্রপাতি, মেশিন, বাড়ি, গাড়ি, রিক্সা, সিএনজি, বাস, ট্রাক, লঞ্চ-স্টিমার, বিমান-হেলিকপ্টার ইত্যাদির মূল্যের উপর যাকাত ফরয নয়। হ্যাঁ, এগুলো দ্বারা উৎপাদিত পণ্য ও উৎপাদিত আয় নিসাব পরিমাণ হয়ে তার উপর বছরকাল অতিবাহিত হলে উক্ত আয়ের অবশ্যই যাকাত দিতে হবে।
ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত : দোকান যে ধরণের হোক না কেন তার ব্যবসায়িক পণ্যের যাকাত আদায় করা ফরয। যদি তা নিসাব পরিমাণ হয়ে তার উপর বছর পূর্ণ হয়।
নোট : দোকানের সকল মালামাল হিসাব করে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হয়। ব্যবসার সকল আয় এক বছরকাল স্থায়ী হতে হয় না।
* দোকানের ঐ আয়ের উপর যাকাত আসবেনা যা সাথে সাথে খরচ হয়ে যায়। দোকানের ঐ আয়ের উপর যাকাত আসবে যা নিসাব পরিমাণ হয়ে ব্যাংক ইত্যাদিতে পূর্ণ এক বছর জমা রয়েছে।
মিশ্রিত সম্পদের যাকাত : যদি কিছু স্বর্ণ, কিছু রূপা ও কিছু টাকা থাকে কিন্তু পৃথক পৃথকভাবে কোনটি নিসাব পরিমাণ নয়। তবে যে কোন দুইটি অথবা সবগুলোর মূল্য একত্রিত করলে যে কোন একটি নিসাব পরিমাণ হয় (যখন যেটির মূল্য কম)। তাহলে তার উপর যাকাত ফরয হবে। (ফতাওয়া শামী : ৩/২৩৪, হিদায়াহ : ১/১৭৯, তাতারখানিয়া : ২/১৭৪)
ফ্ল্যাট বা প্লটের যাকাত : যে ফ্ল্যাট বা প্লট ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে প্রতিবছর তার মার্কেট মূল্যের উপর যাকাত দেওয়া ফরয। আর যদি ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ক্রয় করা হয় তাহলে তার উপর যাকাত আসবে না। (আবূ দাউদ শরীফ : হা. ১৫৬২)
প্রশ্ন : কোন কোন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যায়?
উত্তর : মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি ব্যতীত যাকাতের উপযুক্ত সকল মুসলিম নর-নারীকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে। মাতা-পিতা, ছেলে-সন্তানের উপর মূল সম্পদই ব্যয় করতে হবে যাকাত নয়।
নোট : মাতা-পিতার মধ্যে দাদা-দাদ ও নানা-নানী সহ উপর পর্যন্ত এবং সন্তান-সন্ততির মধ্যে নাতি-নাতনি সহ নিচ পর্যন্ত সকলেই অন্তর্ভুক্ত।
যাকাতের হকদার তথা যাকাত গ্রহণের যোগ্য ব্যক্তি
قال الله تعالى : إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ الله وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِنَ اللهِ وَاللهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ. سورة توبة
অনুবাদ : (১) ফকীরগণ (যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়) (২) মিসকীনগণ (যে একেবারেই কোন কিছুর মালিক নয়।) (৩) সেই সকল কর্মচারীগণ, যারা যাকাত উসূলের কাজে নিয়োজিত (৪) যাদের মনোরঞ্জন করা উদ্দেশ্য তারা (৫) দাস মুক্তির জন্য (মুসলিম বন্ধী), (৬) ঋণগ্রস্তের ঋণ পরিশোধের জন্য (৭) আল্লাহর পথে জিহাদকারীগণ (৮) মুসাফিরগণ। এটা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে প্রদত্ত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবাহ : ৬০)
নোট : ফক্বীর-মিসকীন আত্মীয়-স্বজন ও কুরআন-হাদীস পড়–য়া ছাত্রদেরকে যাকাত দেওয়া অতি উত্তম। প্রথম অবস্থাতে যাকাত আদায়ের পাশাপাশি আত্মীয়তার হক আদায় হয়। ২য় অবস্থাতে যাকাত আদায়ের সাথে সাথে দ্বীন-ধর্ম টিকিয়ে রাখার সহযোগিতা হয়। (মাআরিফুল কুরআন মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ.)
প্রশ্নোত্তরে যাকাতের কতিপয় জরুরী মাসায়িল
১ নং প্রশ্ন : যাকাতের আভিধানিক অর্থ কি?
উত্তর : পবিত্রতা ও বৃদ্ধি।
২ নং প্রশ্ন : যাকাতের শরয়ী সংজ্ঞা কি? অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় যাকাত কাকে বলে?
উত্তর : যাকাতের হক্বদার ব্যক্তিকে বিশেষ শর্তে বিশেষ সম্পদের মালিক বানিয়ে দেওয়া।
৩ নং প্রশ্ন : কতটুকু রূপার উপর যাকাত ফরয হয়?
উত্তর : সাড়ে বায়ান্ন তোলা বা তার অধিক রূপার উপর যাকাত ফরয হয়। (যদি শুধু রূপা থাকে)
৪ নং প্রশ্ন : কত টাকার উপর যাকাত ফরয হয়?
উত্তর : সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ টাকার উপর যাকাত ফরয হয়। (যদি শুধু টাকা থাকে)
৫ নং প্রশ্ন : কতটুকু ব্যবসায়িক পণ্যের উপর যাকাত ফরয হয়?
উত্তর : তার মূল্য যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়। (যদি শুধু ব্যবসায়িক সম্পদ থাকে)
৬ নং প্রশ্ন : যদি কারো নিকট কিছু স্বর্ণ এবং কিছু রূপা আছে বা কিছু স্বর্ণ এবং কিছু নগদ টাকা-পয়সা আছে। বা কিছু রূপা এবং কিছু ব্যবসায়িক মালামাল আছে। এগুলো একত্রিত করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়। তাহলে কি যাকাত ফরয হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, যাকাত ফরয হবে।
৭ নং প্রশ্ন : বিচরণশীল পশু ও জন্তুর উপর কি যাকাত ফরয?
উত্তর : হ্যাঁ, যাকাত ফরয।
৮ নং প্রশ্ন : মালিকে নিসাব ব্যক্তির বছরের মধ্যবর্তী সময়ে যদি তার ৩৫ হাজার টাকা আয় হয়, তাহলে কি ঐ ৩৫ হাজার টাকাও যাকাতের মালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, উক্ত ৩৫ হাজার টাকাও যাকাতের মালের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অর্থাৎ এগুলোরও যাকাত দিতে হবে।
৯ নং প্রশ্ন : মিল-কারখানা ইত্যাদির মেশিনারী যন্ত্রপাতি যেগুলো দ্বারা মালামাল তৈরী করা হয় সেগুলোর উপর কি যাকাত ফরয?
উত্তর : না, ঐগুলোর উপর যাকাত ফরয নয়।
১০ নং প্রশ্ন : ব্যবহারিক অলংকার এর উপর কি যাকাত ফরয?
উত্তর : হ্যাঁ, যাকাত ফরয।
১১ নং প্রশ্ন : স্বর্ণের সাথে যে পরিমাণ খাদ থাকে উক্ত খাদের উপর কি যাকাত ফরয?
উত্তর : না, খাদের অংশ বাদ দিয়ে শুধু স্বর্ণের অংশের যাকাত দিতে হয়।
১২ প্রশ্ন : স্বর্ণলংকার ছাড়া অন্য কোন ধাতু যেমন হিরা, মুক্তা ও মুল্যবান পাথরের অলংকার এর উপর যাকাত ফরয?
উত্তর : না, ফরয নয়।
১৩ নং প্রশ্ন : যাকাত ইংরেজী মাসের হিসেবে আদায় করা হবে নাকি হিজরী তথা চন্দ্র মাসের হিসেবে আদায় করা হবে?
উত্তর : চন্দ্র মাস হিসেবে যাকাত আদায় করা হবে।
১৪ নং প্রশ্ন : যদি কোন ব্যক্তি বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে প্লট বা ফ্ল্যাট ক্রয় করে। তাহলে এর উপর কি যাকাত ফরয হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, এর উপর যাকাত ফরয হবে।
১৫ নং প্রশ্ন : যদি ফ্ল্যাট-প্লট ও জমিজমা ইত্যাদি ক্রয় করার সময় বিক্রয় করার নিয়্যত ছিলনা, তবে ক্রয় করার পর বিক্রয় করার মনস্থ করল তাহলে কি এর উপর যাকাত ফরয হবে?
উত্তর : বিক্রয় করার পর অর্জিত টাকার উপর যদি একবছর পূর্ণ হয়, তখন উক্ত টাকার যাকাত দেওয়া ফরয।
১৬ নং প্রশ্ন : যে ফ্ল্যাট-বাড়ী নিজে বসবাস করার জন্য ক্রয় করা হয়েছে তার উপর কি যাকাত আসবে?
উত্তর : না।
১৭ নং প্রশ্ন : যদি কেহ ফ্ল্যাট বেচা-কেনার ব্যবসা করে এবং ফ্ল্যাট ক্রয় করার সময় বিক্রয় করে দেওয়ার উদ্দেশ্য ক্রয় করে। তাহলে তার যাকাত কিভাবে আদায় করা হবে?
উত্তর : প্রতি বছরের মার্কেট মূল্য হিসেবে যাকাত আদায় করবে।
১৮ নং প্রশ্ন : যে জায়গা ভাড়া দেওয়া হয়েছে তার যাকাতের কি হুকুম?
উত্তর : তার অর্জিত ভাড়া যখন নিসাব পর্যন্ত পৌঁছবে তখন তার উপর যাকাত ফরয হবে।
১৯ নং প্রশ্ন : পবিত্র হজ¦ পালনের জন্য যে টাকা জমা করা হয় উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা কি ফরয?
উত্তর : হ্যাঁ, যাকাত আদায় করা ফরয। হজে¦র জন্য খরচ করার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিবছর উক্ত টাকার যাকাত দেওয়া ফরয।
২০ নং প্রশ্ন : আমরা কাউকে যাকাত প্রদান করেছি কিন্তু যাকাত প্রদান করার সময় তাকে যাকাতের টাকা যে এটা বলেনি। তাহলে কি যাকাত আদায় হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, যাকাত আদায় হবে।
২১ নং প্রশ্ন : কোন কর্মচারী তার মালিকের নিকট বেতন বৃদ্ধির আবেদন করলে, মালিক তার যাকাতের টাকা থেকে যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে কর্মচারীর বেতন বৃদ্ধি করে দিল। এতে কি তার যাকাত আদায় হয়ে গেছে?
উত্তর : না, তার যাকাত আদায় হয়নি।
২২ নং প্রশ্ন : ইনকামটেক্স আদায় করার দ্বারা কি যাকাত আদায় হয়ে যায়?
উত্তর : না, যাকাত আদায় হয় না।
২৩ নং প্রশ্ন : নিজের মাতা-পিতা, সন্তান-সন্ততি, এভাবে স্বামী স্ত্রী একে অপরকে কি যাকাত দিতে পারে?
উত্তর : না, দিতে পারে না।
২৪ নং প্রশ্ন : যে লোক মালিকে নিসাব তাকে কি যাকাত দেওয়া জায়েয?
উত্তর : না।
২৫ নং প্রশ্ন : বিশ্বনবী সা. এর বংশধরকে কি যাকাত দেওয়া যেতে পারে?
উত্তর : না।
২৬ নং প্রশ্ন : আপন ভাই-বোন, চাচা, ভাতিজা, মামা, ভাগিনা ইত্যাদিকে কি যাকাত দেওয়া জায়েয?
উত্তর : যদি যাকাতের উপযুক্ত হয়। তাহলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েয।
২৭ নং প্রশ্ন : নবীজি সা. এর বংশধর তথা হযরত আলী রা.-এর বংশধর হযরত আকীল রা. এর বংশধর, হযরত জাফর রা. এর বংশধর, হযরত আব্বাস রা. এর বংশধর এবং হযরত হারিছ বিন আবদুল মুত্তালিব রা. এর বংশধর। উপরোক্ত পাঁচজনের বংশধরগণকে যাকাত দেওয়া কি জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নেই।
২৮ নং প্রশ্ন : যদি কোন সায়্যিদ বংশের লোক গরিব ও অভাবী হয় তাহলে কিভাবে তাকে সাহায্য করা যেতে পারে?
উত্তর : যাকাত, সদকা ব্যতীত অন্য ফান্ড থেকে তাকে সাহায্য করতে হবে।
২৯ নং প্রশ্ন : সায়্যিদ বংশের লোকদের যাকাত দেওয়া যায়না কেন?
উত্তর : যাকাত হলো মানুষের ধন সম্পদের ময়লা-আবর্জনা তাই।
৩০ নং প্রশ্ন : সায়্যিদ ব্যক্তির গায়রে সায়্যিদ স্ত্রী যিনি যাকাতের উপযুক্ত। তাকে যাকাত দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।
৩১ নং প্রশ্ন : ধনী ও সম্পদশালী স্ত্রীর গরিব স্বামী তার স্ত্রী ব্যতীত অন্যদের থেকে যাকাত নিতে পারবে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, নিতে পারবে।
৩২ নং প্রশ্ন : অমুসলিমকে তো নফল সদকা দেওয়া যেতে পারে। তবে তারা কি যাকাত, সদকায়ে ফিতর খাওয়ার কি উপযুক্ত?
উত্তর : না, তারা যাকাত ও সদকায়ে ফিতরের উপযুক্ত নয়। তাদেরকে তা দেওয়া যাবে না।
৩৩ নং প্রশ্ন : দ্বীনি মাদ্রাসার মধ্যে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে কি?
উত্তর : হ্যাঁ, বরং উত্তম। কেননা, এতে দ্বীনের প্রচার-প্রসার লাভ হয়।
৩৪ নং প্রশ্ন : মালিকে নিসাব ব্যক্তি যদি নিজেকে মিসকীন দাবি করে যাকাত নেয় তাহলে তার হুকুম কি?
উত্তর : তার জন্য যাকাত নেওয়া হারাম।
৩৫ নং প্রশ্ন : চাঁদা উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা থেকে নির্দিষ্ট অংশ দেওয়া কি জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নেই।
৩৬ নং প্রশ্ন : যে যমীনে বৃষ্টির পানি দ্বারা সেচ দেওয়া হয় তার উৎপাদিত ফসলের কত অংশ আল্লাহর রাস্তায় দান করা ওয়াজিব?
উত্তর : দশ ভাগের একভাগ।
৩৭ নং প্রশ্ন : যে যমীনে বৃষ্টির পানি ব্যতীত অন্যান্য পানি দ্বারা সেচ দেওয়া হয়। তার উৎপাদিত ফসলের কত অংশ সদকা করা ওয়াজিব?
উত্তর : বিশ ভাগের এক ভাগ।
৩৮ নং প্রশ্ন : যদি এক দেশের কারেনসি রেট দ্বারা যাকাত আদায় করে অন্য দেশে পাঠানো হয়। তাহলে যাকাত কোন দেশের কারেনসি হিসেবে আদায় হবে?
উত্তর : যে দেশের কারেনসি রেট দ্বারা যাকাত আদায় করা হয়েছে সে দেশের কারেনসি হিসেবে আদায় হবে।
৩৯ নং প্রশ্ন : বসবাসের বাড়ী, ঘর পরিধানের কাপড়, ঘরের আসবাবপত্র এবং সাওয়ারীর মধ্যে কি যাকাত ফরয?
উত্তর : না, উপরোক্ত বস্তুর যাকাত ফরয নয়।
৪০ নং প্রশ্ন : হিরা, মণিমুক্তা, ইয়াকূত জাবরযদ ইত্যাদি খনিজ পদার্থ যদি ব্যবসার না হয়, ঐগুলোর উপরও কি যাকাত ফরয হবে?
উত্তর : না। এ ধরণের ব্যবহারিক বস্তুর উপর যাকাত ফরয নয়।
৪১ নং প্রশ্ন : যাকাত কখন ফরয হয়?
উত্তর : নিসাব পরিমাণ সম্পদ চন্দ্র বছরকাল স্থায়ী হলে।
৪২ নং প্রশ্ন : জনৈক ব্যবসায়ী বছরের শুরুতে মালিকে নিসাব বনে গেল। বছরের মধ্যবর্তী সময়ে তার মাল আরো বৃদ্ধি পেল। তাকে সমস্ত মালের যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : সমস্ত মালের যাকাত দিতে হবে।
৪৩ নং প্রশ্ন : যে ব্যক্তি নিজের সকল মাল সম্পদ সদকা করে ফেলে। আর সদকা করার সময় যাকাতের নিয়্যত করেনি। এতে তার থেকে কি যাকাত সাকিত বা রহিত হয়ে যাবে?
উত্তর : হ্যাঁ, তার থেকে যাকাত রহিত হয়ে যাবে।
৪৪ নং প্রশ্ন : যদি কেহ কোন ফকীর থেকে কর্জ পাওনা থাকে এতে যদি যাকাতের নিয়্যতে সেই পাওনা মা’ফ করে দেয়, তাহলে কি তার যাকাতের আদায় শুদ্ধ হবে?
উত্তর : না, তার যাকাত আদায় শুদ্ধ হবে না। এরকম করা যেতে পারে তাকে নতুনভাবে যাকাত দিবে অতঃপর উনাকে মালিক বানিয়ে দেওয়ার পর উনি উক্ত টাকা দ্বারা আপনার কর্জ পরিশোধ করবে।
৪৫ নং প্রশ্ন : স্বর্ণ-রূপার যাকাত ওজন করে স্বর্ণ-রূপার টুকরো আদায় করবে নাকি তার মূল্য আদায় করবে?
উত্তর : উভয়টির সুযোগ রয়েছে।
৪৬ নং প্রশ্ন : মালদার ও ধনী ব্যক্তিকে কি যাকাত দেওয়া জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৪৭ নং প্রশ্ন : গরিব পিতার নাবালেগ ছেলে-মেয়েকে যাকাত দিলে আদায় হবে?
উত্তর : আদায় হবে।
৪৮ নং প্রশ্ন : ধনী পিতার নাবালেগ ছেলে-মেয়েকে যাকাত দিলে আদায় হবে?
উত্তর : আদায় হবে না। তবে বাবা যদি তার উপর অর্পিত নিজ নাবালেগ ছেলে-মেয়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন না করে তখন দেওয়া যাবে।
৪৯ নং প্রশ্ন : ধনী পিতার গরিব বালেগ ছেলে-মেয়েকে যাকাত দিলে আদায় হবে?
উত্তর : আদায় হবে।
৫০ নং প্রশ্ন : ফকীর কাকে বলে?
উত্তর : ফক্বীর ঐ লোককে বলা হয়, যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়। তথা নিসাবের চেয়ে কম মালের মালিক।
৫১ নং প্রশ্ন : মিসকীন কাকে বলে?
উত্তর : মিসকীন ঐ লোককে বলা হয়, যে একেবারেই কোন কিছুর মালিক নয়।
৫২ নং প্রশ্ন : আমেল তথা যাকাত উত্তোলনকারী কাকে বলে?
উত্তর : আমেল তথা যাকাত উত্তোলনকারী ঐ লোককে বলা হয়, যাকাত আদায়কারীদের থেকে যাকাত, ওশর উসূল করে নিয়ে আসার জন্য যাকে ইসলামী হুকূমতের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
৫৩ নং প্রশ্ন : ঋণগ্রস্ত কাকে বলে?
উত্তর : ঋণগ্রস্ত ঐ ব্যক্তিকে বলা হয়, যার উপর এত পরিমাণ ঋণ ও কর্জ রয়েছে যে ঋণ-কর্জ আদায় করার পর সে আর মালেকে নিসাব থাকে না। ব্যবসায়িক ঋণের মাসআলা ভিন্ন।
৫৪ নং প্রশ্ন : যাকাতের মাসরাফ তথা খাতসমূহের মধ্যে মুসাফির থেকে কি উদ্দেশ্য?
উত্তর : মুসাফির থেকে ঐ লোক উদ্দেশ্য, যার নিজ দেশে সম্পদ রয়েছে কিন্তু সফরের মধ্যে তার কাছে সম্পদ আনার কোন মাধ্যম নেই।
৫৫ নং প্রশ্ন : মুসাফিরকে যাকাতের কত টাকা দেওয়া জায়েয?
উত্তর : মুসাফিরকে যাকাতের এত টাকা পরিমাণ টাকা দেওয়া যেতে পারে যদ্বারা সে নিজ দেশে পৌঁছে যেতে পারে।
৫৬ নং প্রশ্ন : যাকাতের সকল প্রকার হকদার এর উপর যাকাতের টাকা খরচ করা জায়েয নাকি শুধুমাত্র যেকোন এক প্রকারের উপর খরচ করা জায়েয?
উত্তর : উভয়ই জায়েয।
৫৭ নং প্রশ্ন : গরিব অমুসলিম নর-নারী কিংবা কোন অমুসলিম প্রতিষ্ঠান প্রতিনিধিকে যাকাত দিলে কি ফরয আদায় হবে?
উত্তর : না. আদায় হবে না।
৫৮ নং প্রশ্ন : বনী হাশেম ও তাদের গোলামদেরকে কি যাকাত দেওয়া জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৫৯ নং প্রশ্ন : মালিকে নিসাব ব্যক্তি নিজের উসূল তথা মাতা-পিতা, দাদা-দাদী, নানা-নানী এভাবে উপর পর্যন্ত লোকদের কি যাকাত দেওয়া জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৬০ নং প্রশ্ন : মালিকে নিসাব ব্যক্তি স্বীয় ছেলে, নাতি-পুতি নিচ পর্যন্ত লোকদেরকে কি যাকাত দেওয়া জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৬১ নং প্রশ্ন : মালিকে নিসাব স্ত্রীর জন্য নিজ স্বামীর উপর এবং মালিকে নিসাব স্বামী নিজ স্ত্রীর উপর যাকাতের টাকা খরচ করা কি জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৬২ নং প্রশ্ন : মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ অথবা রাস্তা, ব্রীজ-পুল ইত্যাদি তৈরীর কাজে যাকাতের টাকা খরচ করা কি জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৬৩ নং প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তি কাফনের কাজে অথবা মৃত ব্যক্তির কর্জ পরিশোধে যাকাতের টাকা খরচ করা কি জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৬৪ নং প্রশ্ন : যাকাতের আদায় তামলীক তথা মালিক বানানো ব্যতীত কি শুদ্ধ হবে?
উত্তর : না, শুদ্ধ হবে না। উপযোগী ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে।
৬৫ নং প্রশ্ন : যাকাতের টাকা আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের উপর খরচ করা কি জায়েয?
উত্তর : বরং উত্তম।
৬৬ নং প্রশ্ন : এক ব্যক্তিকে পূর্ণ নিসাব পরিমাণ যাকাতের টাকা দেওয়া কি জায়েয?
উত্তর : মাকরূহে তানযিহী।
৬৭ নং প্রশ্ন : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ কাজে নিসাব থেকে বেশি যাকাতের টাকা খরচ করা কি মাকরূহ?
উত্তর : না, মাকরূহ নয়।
৬৮ নং প্রশ্ন : প্রয়োজন ব্যতীত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাকাত স্থানান্তর করা কেমন?
উত্তর : মাকরূহে তাহরিমী।
৬৯ নং প্রশ্ন : নিজ আত্মীয় স্বজন ও ধর্মীয় স্বজনদের জন্য যাকাত স্থানান্তর করা কেমন?
উত্তর : মাকরূহ নয়, জায়েয।
৭০ নং প্রশ্ন : মসজিদ-মাদ্রাসা, রাস্তা-ঘাট, পুল, ব্রীজ ইত্যাদি মেরামতের কাজে যাকাতের টাকা খরচ করা কি জায়েয?
উত্তর : না, জায়েয নয়।
৭১ নং প্রশ্ন : এক লোক সে যাকাতের হকদার নয় কিন্তু সে ডাক্তার হতে চায়। তাকে কি যাকাত দেওয়া যাবে?
উত্তর : না, দেওয়া যাবে না। হ্যাঁ, নফল সদকা দ্বারা তাকে সাহায্য সহযোগিতা করা যেতে পারে।
৭২ নং প্রশ্ন : যাকাতের হক্বদার নিজ আপন ভাইকে কি যাকাতের টাকা দিতে পারবে?
উত্তর : হ্যাঁ, দেওয়া যাবে।
৭৩ নং প্রশ্ন : আপন চাচত ভাই মামাত ভাই অথবা ভাতিজাকে কি যাকাত দেওয়া যাবে?
উত্তর : হ্যাঁ, দেওয়া যাবে।
৭৪ নং প্রশ্ন : মাদ্রাসার মুহতামিম অথবা নাজেম সাহেব যারা ছাত্রদের উকিল হয়, তাদেরকে কি যাকাত দেওয়া যাবে?
উত্তর : হ্যাঁ, দেওয়া যাবে। বরং তাঁদেরকে দেওয়া উত্তম। কারণ এতে দ্বীন-ধর্ম রক্ষার পক্ষে সহযোগিতা হয়।
৭৫ নং প্রশ্ন : যাকাত কি স্বর্ণের কেনা মূল্য হিসেবে আদায় করবে নাকি বেচা মূল্য হিসেবে আদায় করবে?
উত্তর : বর্তমান মূল্য হিসেবে।
৭৬ নং প্রশ্ন : যাকাতের হক্বদার বা উপযোগী নিজ ভাগিনার শিক্ষা দীক্ষার কাজে যাকাতের টাকা কি খরচ করা যাবে?
উত্তর : হ্যাঁ, যাবে। তবে যাকাতের টাকা তার হাতে দিয়ে দিতে হবে যাতে সে মালিক বনে যায়।
৭৭ নং প্রশ্ন : নাবালেগ ছেলে-মেয়ের মালের উপর কি যাকাত ফরয?
উত্তর : না, যাকাত ফরয নয়।
৭৮ নং প্রশ্ন : মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের মাসিক বেতন যাকাতের টাকা থেকে দেওয়া যাবে কি?
উত্তর : না, দেওয়া যাবে না।
৭৯ নং প্রশ্ন : নফল সদকার গোশত সদকাকারীও কি ভক্ষণ করতে পারবে?
উত্তর : হ্যাঁ, পারবে।
৮০ নং প্রশ্ন : ওয়াজিব সদকা যেমন মান্নত ইত্যাদির গোশত কি সদকাকারী নিজেও খেতে পারবে?
উত্তর : না, পারবে না।
৮১ নং প্রশ্ন : প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকার উপর পূর্ণ যাকাত ফরয হবে?
উত্তর : উক্ত টাকা হাতে আসার পর এক বছরকাল স্থায়ী হলে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। কিন্তু বেতনের টাকা চাকরিজীবী রিসিভ করার পর স্বেচ্ছায় যদি প্রভিডেন্ট ফান্ড কিংবা অন্য কোন ফান্ডে জমা করে তার উপর প্রতিবছর যাকাত ফরয হবে।
৮২ নং প্রশ্ন : দোকানের মালামাল ও অন্যান্য ব্যবসায়ী সম্পদের হিসাব করার সহজ উপায় কি হতে পারে?
উত্তর : তিন প্রকারে করা যায়। ০১। খুচরা মূল্য ০২। পাইকারী মূল্য ০৩। সমস্ত মাল এক সাথে বিক্রি করার মূল্য।
উপরোক্ত তিন প্রকারের মধ্যে পাইকারী মূল্যের হিসাবে যাকাত বের করা উত্তম।
৮৩ নং প্রশ্ন : বাকিতে দেওয়া কাস্টমারের হাতে ব্যবসার যে টাকা বকেয়া আছে উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : দিতে হবে না। তবে ফেরৎ পাওয়ার পর পিছনের বছর সমূহের যাকাতও একত্রে আদায় করতে হবে।
৮৪ নং প্রশ্ন : ঋণ দেওয়া টাকার উপর যাকাত ফরয হয়?
উত্তর : না, ফেরত পাওয়ার আশা না থাকলে যাকাত দিতে হবে না। তবে ফেরৎ পেলে বিগত বছরগুলোরও যাকাত দিতে হবে।
৮৫ নং প্রশ্ন : ইসলামী শরীয়া মুতাবিক পরিচালিত ব্যাংক সমূহে নির্ধারিত মেয়াদের জন্য এফ.ডি.আর. করে এককালীন বা মাসিক জমা করা হলে উক্ত টাকার যাকাত দেওয়ার নিয়ম কি?
উত্তর : ইসলামী ব্যাংক সমূহে এফ.ডি.আর. করলে মূল টাকা ও লাভের টাকা উভয়ের যাকাত দিতে হবে। উক্ত টাকার যাকাত দেওয়ার নিয়ম হল, বছর শেষে উক্ত হিসাব ক্লোজড করলে মূল টাকা সহ যত টাকা পাওয়া যেতে পারে (গ্রাহক চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিবরণ দিবে) পুরো টাকার যাকাত আদায় করতে হবে।
সূদী ব্যংক সমূহের ব্যাপারটি ভিন্ন। এতে শুধু মূল টাকার যাকাত দিতে হবে। সূদের পরিমাণটি (ছাওয়াবের আশা না করে) দান করে দিবে।
৮৬ নং প্রশ্ন : বীমা কোম্পানীর নিকট জমাকৃত টাকার যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, দিতে হবে।
৮৭ নং প্রশ্ন : জমিজমা ক্রয় করার সময় বায়না স্বরূপ যে টাকা দেওয়া হয়, উক্ত টাকার যাকাত কার উপর ফরয?
উত্তর : উক্ত টাকার মালিক জমি বিক্রেতা বিধায়, বিক্রেতাকেই তার যাকাত দিতে হবে।
৮৮ নং প্রশ্ন : সালামী ও সিকিউরিটি মানি হিসেবে যে টাকা দোকান ঘর ও বিল্ডিং এর মালিকগণকে দেওয়া হয়। উক্ত টাকার যাকাত কে দিবে?
উত্তর : উক্ত টাকা যদি সম্পাদিত চুক্তি মতে প্রতি মাসে নির্ধারিত ভাড়া থেকে কর্তন করা হয়, তখন এই টাকার মালিক সাব্যস্ত হবে মালিক পক্ষ। অতএব যাকাত উপযোগী হলে মালিকগণকেই এ টাকার যাকাত দিতে হবে। আর যদি কোনরকম কর্তন ব্যতীত চুক্তির মেয়াদ শেষে উক্ত টাকা ফেরতযোগ্য হয় তখন ঐ টাকার মালিক থাকবেন ভাড়াটিয়াগণ। অতএব সংরক্ষিত এই টাকার প্রতিবছর যাকাত দিতে হবে ভাড়াটিয়াগণকে।
৮৯ নং প্রশ্ন : কেউ নিজে বসবাসের জন্য বাড়ি তৈরী করার উদ্দেশ্যে টাকা সঞ্চয় করলে উক্ত টাকার যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, অবশ্যই দিতে হবে। বাড়ি করার আগ পর্যন্ত প্রতিবছর উক্ত টাকার যাকাত দেওয়া ফরয।
৯০ নং প্রশ্ন : বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার, যা দাম বাড়লে বিক্রি করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে উক্ত শেয়ারের যাকাত কিভাবে দিতে হয়?
উত্তর : প্রতিবছরের হিসাবকালীন সময়ের পূর্ণ বাজার দর হিসেবে যাকাত দিতে হবে।
৯১ নং প্রশ্ন : কারো নিকট বছরে শুরু ও শেষে নিসাব পরিমাণ সম্পদ ছিল। কিন্তু বছরের মাঝে এক দুই মাস নিসাব থেকে কমে যায়। তাকে যাকাত দিতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, তাকে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। তবে মাঝখানে সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে গেলে তখন পূর্বের সময় বাদ যাবে। নতুনভাবে যখন নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তখন থেকে বছর গণনা শুরু হবে। অতএব তখন থেকে পূর্ণ একবছর অতিবাহিত হলে যাকাত দেওয়া ফরয হবে।
বি: দ্র:
উপরোক্ত মাসআলা সমূহের কুরআন-সুন্নাহ ভিত্তিক যথাযথ দলিল-প্রমাণ আমার নিকট সংরক্ষিত আছে।
সংক্ষিপ্ততার লক্ষ্যে এখানে দেওয়া হয়নি। প্রয়োজন মনে করলে নি¤েœাক্ত নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। তবেকোথাও ভুল পরিলক্ষিত হলে অধমকে বগতি করে বাধিত করার জন্য সবিশেষ অনুরোধ রইল।
সংকলনে
মুহাম্মদ কিফায়তুল্লাহ শফিক
খাদিমে দারুল ইফতা
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া টেকনাফ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, কক্সবাজার, বাংলাদেশ
মোবাইল : ০১৮১৭০০৯৩৮৩
হোয়াটসঅ্যাপ : ০১৮৬৮৫১৫১৫১
তারিখ : ২৫ শে রমাযানুল মুবারক ১৪৪৪ হিজরী
মুতাবিক ১৭/০৪/২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ