চলমান বিশ্বে অন্তহীন আলো ছড়ানো পূর্ণিমার মতো উজ্জ্বল একটি নাম – আল্লামা তাক্বী উসমানী। বহু
গবেষণা গ্রন্থের রচয়িতা। মুসলিম বিশ্বের অবিসংবাদিত ইমাম। ভারতে এক উলামা সম্মেলনে প্রধান অতিথির
বক্তব্যে তিনি বলেন, “যদি আমরা বাস্তবে তালিবে ইল্ম হতে পারতাম তাহলে একটি বড় নেয়ামতের অধিকারী
হয়ে যেতাম।” তিনি উপমহাদেশের বরেণ্য সাধক হযরত থানভী রহ. এর বাণী উল্লেখ করেন, হযরত হাকীমুল
উম্মত একদিন বলেন, “আল্লাহ তায়ালার দয়া, অনুগ্রহ এবং তাঁর উপর ভরসা করে বলতে পারি, গোটা বিশ্বের
শিক্ষিত বিজ্ঞানী ও কথিত সুশিল সমাজ একত্র হয়ে ইসলামের বিপক্ষে কোনো প্রশ্ন আরোপ করলে আমি এর
সমাধান দিতে সক্ষম। দু‘মিনিটেই আমি তাদেরকে নির্বাক করতে পারবো। অতঃপর বলেন, আমি তো এক
নগণ্য তালিবে ইল্ম মাত্র।
হযরত হাসান বসরী রহ. একদিন কোথাও যাচ্ছিলেন। পেছন থেকে জনৈক ব্যক্তি তাকে ফক্বীহ বলে
ডাকছিলেন। হাসান বসরী তার ডাকে সাড়া দেননি। ভাবলেন হয়তো কোনো ফক্বীহকে ডাকছে। আহ্বানকারী
এভাবে কয়েকবার ডেকে নিকটে এসে বললো হে ফক্বীহ! আমি আপনাকেই সম্বোধন করছি। হাসান বসরী
বলেন,
أوهل رأيت فقيها؟ إنما الفقيه الزاهد فى الدنيا والراغب فى ال خرة
“তুমি কি কোনো ফক্বীহকে দেখেছো ? ফক্বীহ তো হলো ঐ ব্যক্তি, যে পরকালের চিন্তায় ইহকাল বিমুখ
থাকে।”( মুর্তাজা আয যাবেদী,ইতহাফুস সাদাতিল মুত্তাকীন : ১/৩৭৩ )
আমাদের আকাবির ও আসলাফের আমল ছিল এটাই। তারা সারাজীবন নিজেদেরকে তালিবে ইল্ম
মনে করতেন।পরকালের চিন্তায় ইহকাল কুরবানী করতেন। ইল্ম অর্জনের জন্য সর্বদা পীপাসু থাকতেন।
বিলিন করে দিতেন গোটা জীবনটা ইল্ম অর্জনের জন্য। ইল্ম অর্জনের ক্ষেত্রে ধ্রুব সত্য আরবী একটি সুন্দর
প্রবাদ বাক্য আছে,
اطلب العلم من المهد إلى اللحد
“জ্ঞানার্জন করো দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত।”
( আব্দুল ফাত্তাহ আবুগুদ্দাহ , কীমাতুয যামান ইনদাল উলামা : পৃ ৩০ টীকা : ১ )
হযরত ফক্বীহুল মিল্লাত মুফতী আব্দুর রহমান রহ. আমরণ সহীহ বুখারীর দরস দিয়েছেন।ইফতা
বিভাগেরছাত্রদের তামরীন দেখতেন। টেলিফোনে কেউ মাসআলা জিজ্ঞাসা করলে তা নিয়ে নিজেই গবেষণা
করতেন। গাড়িতেও মুতালায়ার জন্য কিতাব পত্র এবং আকাবিরের মালফুজাত রেখে দিতেন।
হযরত ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর ঘটনা। তিনি ছিলেন মৃত্যুশয্যায়, কঠিন রোগে আক্রান্ত। তাঁর
সেবায় নিয়োজিত ছাত্রটির সাথে তখনো তিনি হজ্বের সময় কঙ্কর নিক্ষেপ সম্পর্কিত একটি মাসআলা পর্যালোচনা
করতে ছিলেন। ওই ছাত্রটি বলে, মাসআলাটি শুনে ইমাম সাহেবের কাছ থেকে বেরিয়ে কয়েক কদম চলতেই
ঘর থেকে কান্নার করুণ শব্দ শুনতে পাই। জানতে পারলাম,ইমাম আবু ইউসুফ রহ. ইহকাল ত্যাগ করে
প্রভুরসান্নিধ্যে চলে গেছেন। মুফতী আযীযুর রহমান রহ. দারুল উলূম দেওবন্দের প্রধান মুফতী ছিলেন। তাঁর
ফাতাওয়াগুলো দশ ভলিয়মে প্রকাশিত হয়েছে। মৃত্যুশয্যায় তিনি একটি ফাতাওয়ার প্রশ্ন পড়তে ছিলেন। পাশে
বসা সবার চোখের সামনে হঠাৎ কাগজটি তাঁর বুকে পড়ে গেল। এ জগতে তাঁর এই শেষ নিশ্বাস। হাদীস
বিসারদ ইমাম ইবনে মঈনের কথাই বলি। মৃত্যুশয্যায় তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো,
ماذا تشتهى؟ قال بيت خالى و إسناد عالى
আপনার কি আগ্রহ ?উত্তর আসে, “ যে ঘরে কেউ নাই। আর সুউচ্চ সনদ চাই।” ( হাফেজ ইবনুস সালাহ, আল
মুকাদ্দামাহ : ২৭২ )
আসলে সত্যিকার তালিবে ইল্ম সেই যার প্রতিটি মুহূর্ত জ্ঞান পিপাসায় অতিবাহিত হয়।
সঠিক পথের বড় প্রতিবন্ধক
ইল্ম অর্জনের পথে আমাদের প্রথম কর্তব্য হলো, নিজেদের তালিবে ইল্ম হিসেবে মনে করা। ইলমের
গভীর সাগরে অর্জন অতি অল্প ধারণা করা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,
وما أ وتيت م من العلم إ ال قليل
“ তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।” (বনী ইসরাইল-৮৫)
ইলমের তলব না থাকলে মানুষ অল্প পড়াশুনাতেই নিজেকে তুষ্ট মনে করে। নিজেকে অনেক বড় করে দেখে।
এ জাতীয় ইল্ম অর্জন মানুষের মধ্যে গর্ব, অহংকার এবং নেতৃত্ব ও সম্পদের লোভ সৃষ্টি করে। সত্য গ্রহণ
থেকে বঞ্চিত করে। সরল ও সঠিক পথের জন্য হয় সব চেয়ে বড় প্রতিবন্ধক।
সত্যিকার বড় কে ?
ইলমের ময়দানে আজ যারা কচি,অমৃত সুধা আহরণে যারা এখন ছোট তারাই একদিন বড় হবে Ñ অনেক
বড়।বিশ্বজুড়ে বনী আদমকে ইসলামের শারাবান তাহুরা পান করানোর জন্য সাকীদের এই কাফেলা এগিয়ে
যাবে। তারাই উম্মতে মুহাম্মদির পিয়াস মিটাবে,আলোর দিশা দিবে পথহারা জাতিকে। ছিনিয়ে আনবে মুক্তির
সূর্য,চিরকাক্সিক্ষত ফাতহে মুবীন।
ইসলামের ইতিহাসে এক বরিত সম্রাট ইমাম মালেক রহ.।কী ধনে ধনী ছিলেন তিনি! তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ
স. এর উত্তরাধিকারী। মহানবী স. এর রেখে যাওয়া ইলমের ভা-ার পেয়েই তিনি হয়েছিলেন সম্রারটন চেয়েও
বড় সম্রাট। এই ধনের পরশ ছাড়া জগতের সম্রাটগণও অচল। প্রখ্যাত আব্বাসী খলীফা মাহদী। বাদশাহ হারুনুর
রশীদের তিনি বাবা। পবিত্র হজ পালনকালে ইমাম মালেকের সাথে মদীনায় তাঁর দেখা। প্রিয় পুত্র মূসা এবং
হারুনকে আদেশ করেন তাঁর কাছে হাদীস পড়ার জন্য।
ইমাম মালেককে এই উদ্দেশ্যে রাজমহলে আমন্ত্রণ
জানালে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। বাদশা মাহদী এর কারণ জানতে চাইলে ইমাম মালেক উত্তরে বলেন –
এই ইল্ম অত্যন্তসম্মানিত ধন,মহানবীর স. মীরাস। এই ধন নিতে হলে নিজে আসতে হবে। অতঃপর বাদশাহ
মাহদী তাঁর পুত্রদ্বয়কে ইমাম মালেকের কাছে গিয়ে ইল্ম অর্জন করার জন্য পাঠিয়ে দেন।(কাজী আতহার
মোবারকপুরী, আইম্মায়ে আরবায়া,:পৃ ১১১-১১২)
তালিবে ইল্ম ও উলামায়ে কেরাম অনেক সম্মানী। এ জগতের বড় মর্যাদাশীল জাতি। মহানবী স. এর
উত্তরাধিকারী । স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা তাদের শ্রেষ্ঠ মর্যাদা ঘোষণা করেছেন।
يرفع هللا الذين امنوا منكم والذين أوتوا العلم د رجات
“তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা আলেম আল্লাহ তাদের মর্যাদা অনেকগুণে উচ্চ করে দিবেন।”
(মুজাদালাহ-১১)
রাসূলুল্লাহ স . দ্বীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন,
األنبياء ورثة العلماء إن
“নিশ্চয় আলেমরা নবীগণের উত্তরাধিকারী।”( আবু দাউদ সুনান: হা. ৩৬৪৯ হাদীসটি হাসান )
উলামাগণ কী ধনের উত্তরাধিকারী ? ওই ধন নবীদের রেখে যাওয়া ইলমের ধন ভান্ডার।মহানবী স. অসংখ্য হাদীসে উলামায়ে কেরামের সম্মান ও মর্যাদা বর্ণনা করেছেন। যাদের মর্যাদা আল্লাহ ও রাসূল স. প্রদান করেছেন তাদের মর্যাদা বর্ণনার জন্য আর কারো প্রয়োজন নেই। সেই মর্যাদা ক্ষুণœকরার ক্ষমতা কারও নেই।ইমাম আহমদ রহ. এর কথা বলি ! জগৎ বিখ্যাত আলেম ছিলেন । ছিলেন ইতিহাসের ধ্রুবতারা। বাতাসের ডানায় ডানায় উড়ে বেড়ায় তখন তাঁর নাম। স্বার্থের ভিখারী শাসকহিংসায় পুড়ে ছাই। ক্ষুণœ করতে চেয়েছিল তাঁর মর্যাদা। জেলখানায় আবদ্ধ করে চাবুক মেরেছে তাঁকে জল্লাদের মাধ্যমে। মুকুটবিহীন এই সম্রাট মারা গেলে তাঁর জানাযায় মানুষের ঢল নামে। বাদশাহ মুতাওয়াক্কিল তাঁর জানাযার জায়গাটা মেপে বুঝতে পারে অন্তত পঁচিশ লক্ষ মানুষ ইমাম আহমদের জানাযা পড়েছে। ইতিপূর্বে এত বড় জানাযার কোনো নযীর নেই। তাঁর
জানাযা দেখে ২০ হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল। (হাফেজ ইবনে কাসীর,আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ১০/৩৫৬
এই হলো ইল্ম ও আলেমের মর্যাদা। আর বাদশাহ মুতাওয়াক্কিলকে কে চিনে? তিনি তো আজ ইতিহাসের পাতায় বন্দী কালো কালো রেখা মাত্র। এই আমাদের ইমাম আবু হানীফা রহ.। ইতিহাসের আকাশে অন্তহীন এক ফুটন্তগোলাপ । তাঁর জীবদ্দশাতেই বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল ইমাম আযমের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার সুরভি। হিংসেয় পুড়ে ছাই হয়েছিল সমকালীন শাসক
আবু জাফর মনসূর আব্বাসীর অন্তর।কূফা থেকে বাগদাদে ডেকে নিয়ে তাঁকে বাদশাহর অধীনে বিচারপতি হতে নির্দশ করে। ইমামে আযম বাদশাহর এই অধীনতা প্রত্যাখ্যান করেন। জ্বলে উঠে রাজরোষ। কারাবন্দী করে তাঁকে জল্লাদের হাতে প্রতিদিন দশটি করে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দেয়। বয়স তাঁর তখন সত্তর।কী নির্মম অত্যাচার! রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে রশি বেঁধে বাজারে ঘুরানো হতো। এভাবে অত্যাচারের পরেও যখন তিনি নত হননি,তাঁকে বিষ খাইয়ে শহীদ করা হয়। সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। জায়গা কোথায় এতো ভক্তজনের। অনন্তর ছয় বার পড়তে হয় ইমামে আযমের জানাযা।(হাফেজ সুয়ূতী,তাবয়িযুস সহীফা : (১১২)
কোথায় আজ সেই আবু জাফর মনসূর!? ইতিহাসের পাতায় পড়ে থাকা কয়েকটি কালো অক্ষর মাত্র। আর আবু হানীফা তো পূর্ণিমার চাঁদ। বিশ্বজুড়ে তাঁর খ্যাতি। কারণ তিনি মহানবী স. এর রেখে যাওয়া ইলম ও জ্ঞানের পরশে নিজেকে নির্মাণ করেছিলেন। স্বযতনে কুরআন হাদীস লালন করেছিলেন। যা কোনো দিন হারায় না ; ম্লান হয় না। হিংসার আগুনে পুড়ে শেষ হয় না।
আমল ছাড়া ইল্ম প্রাণহীন দেহের ন্যায় শিক্ষা জাতির মেরুদ-। তাহলো সুশিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষাই জাতির উন্নয়ন সাধন করতে পারে। রোধ করতে পারে সব ধরনের নৈতিক অবক্ষয়। প্রকৃত শিক্ষা হলো, কুরআন হাদীসের ইল্ম। তবে দু’টি জিনিস ইলমের অন্তর্ভুক্ত। অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। একটি অপরটির পরিপূরক। একটি হলো জানা ও অর্জন করা। অপরটি হলো বাস্তবায়ন করা। ইল্মকে যতক্ষণ পর্যন্ত জীবনে বাস্তবায়ন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই ইল্ম প্রাণহীন দেহের ন্যায় পড়ে থাকবে। তাই আমরা যা ইল্ম অর্জন করেছি সে অনুযায়ী আমল করার সুদৃঢ় প্রতিজ্ঞা নেই।
তাহলেই সত্যিকার তালিবে ইলমের মর্যাদা লাভ হবে। আতশুদ্ধি আলেমগণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য
একজন আলেম তার ইল্ম অনুযায়ী আমল করবে। আমল করবে নিষ্ঠার সাথে। রাসূলুল্লাহ স. এর তরিকা অনুযায়ী চলবে। জীবন গড়বে সুন্নত মুতাবেক। এটাই কাম্য। প্রকৃত আলেমের তা বৈশিষ্ট্য। আমলের মাধ্যমেই ইহ ও পরকালে আলেমের মর্যাদালাভ হবে । হিংসা বিদ্ধেষও লোভ লালসা থেকে আলেমগণ দূরে থাকবে, অনেক দূরে। জাহির বাতিন পবিত্র করে নিষ্ঠার সাথে খোদার ইবাদত করার নাম আ-তাযকিয়া। আত্মশুুদ্ধির ইসমে আজম হলো আল্লাহওয়ালা আলেমগণের সান্নিধ্য। তারা হলেন আত্মসুদ্ধির কারিগর। ওলীদের সংস্পর্শ আর শাইখের দীর্ঘ সান্নিধ্য ইলমের পরিপূর্ণতা বয়ে আনে। পৌঁছে দেয় সফলতার কাক্সিক্ষত উচ্চ মাকামে। তাদের পরামর্শ ভিত্তিক জীবন গড়ার মাধ্যমে সঠিক পথে অবিচল থাকা সহজ। সহজ সব বাতিলের ছোঁয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা। যোগ্য শাইখের সান্নিধ্য থেকে সঞ্চিত রসেই পূর্ণ হয় ইল্ম ও আখলাকের কলস। প্রাণ
উজ্জ্বল হয় সহীহ আমল ও পূর্ণ মানবতায়। শিষ্যের মাঝে ফুটে উঠে শাইখের পূর্ণরূপ। কুরআন সুন্নাহর বাস্তব প্রতিফলন। এ ধারায় ইবনে মাসউদের আসন পূর্ণকরেছিলেন আলকামা। তাঁর আসনে সমাসীন হয়েছিলেন ইবরাহীম নাখয়ী, তার আসনে হাম্মাদ ইবনে আবু সুলায়মান এবং তার আসনে জগতের শ্রেষ্ঠ ইমাম আবু
হানীফা রহ.।(হাফেজ সুয়ূতী,তাবয়িযুস সহীফা : ২৫)
বারো জামাত তেরো মাদরাসায় পড়ার মতো উড়াল চিন্তা আর মুক্ত মননশীলতায় যারা উড়ে বেড়ানতারা সময়ের প্রজাপতি। যুগ ও জাতির নেতৃত্বের আসন অলঙ্কৃত করা এদের ভাগ্যে হয় না। ইমাম আবু
ইউসুফের কথা বলি! ইমাম আবু হানীফা রহ. এর সতেরো বছরের নিñিদ্র সান্নিধ্যে আবু ইউসুফ হয়েছেন
‘ইমাম’ আবু ইউসুফ।আর যদি আমাদের গোড়ার দিকে তাকাই, কিতাবের পাতা খুললেই আবু হোরায়রা,
আনাস ইবনে মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর, খোলাফায়ে
রাশেদীন রা. এর নাম পাবো। তারা নবীজির সামান্য সময়ের সান্নিধ্যে ছিলেন না। ছিলেন দীর্ঘদিনের প্রবাস ও
নিবাসের সাথী। নবীজির ওফাত পর্যন্ত তারা আলাদা হননি। তাঁর দীর্ঘ সান্নিধ্য তাদের তৈরি করেছিল সত্যিকার
উত্তরাধিকারী রূপে।
আমাদের নিকটঅতীতের কথা বলেই শেষ করি। কাসেমী চিন্তা দর্শন ও আদর্শের বাহক শাইখুল হিন্দ
রহ.। দারুল উলুম দেওবন্দের প্রথম ছাত্র এই শাইখুল হিন্দ কীভাবে হযরত নানুতবীর কাছ থেকে ইলম ও
আদর্শ গ্রহণ করেছিলেন তা ভাববার বিষয়। হযরত শাইখুল হিন্দের বৈশিষ্ট্য ও চরিত্রের নন্দিত উদাহরণ ছিলেন
শাইখুল ইসলাম মাদানী রহ.। আবেগ আস্থা ও ভালোবাসাপূর্ণ দীর্ঘ সান্নিধ্যের মাধ্যমেই তারা আপন শাইখের
রঙে নিজেকে রাঙিয়ে তুলেছিলেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন
لقد من هللا على المؤمنين إذ بعث فيهم رسوال من أنفسهم يتلوا عليهم آياته ويزكيهم ويعلمهم الكتاب
والحكمة
“ আল্লাহ ঈমানদারদের উপর অনুগ্রহ করেছেন, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন।
তিনি তাদের কাছে তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদেরকে পরিশোধন করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও
হিকমতের কথা শিক্ষা দেন।”(আলে ইমরান-১৬৪)
শিক্ষা ও আত্মশুদ্ধির জন্য আল্লাহ তায়ালা নবীজি স. কে প্রেরণ করেছেন। তাই এ কাজ দুটি রাসুলুল্লাহ
স. এর অবর্তমানে আমাদের দায়িত্ব। সাথে সাথে লক্ষণীয়, ইলম ও আত্মশুদ্ধি মহানবী স. এর যোগ্য
উত্তরাধিকারী থেকেই গ্রহণ করতে হবে। নিজে কুরআন কিতাব পড়ে নববী ইলম ও আত্মসুদ্ধি অর্জন করা যাবে
না। তাই কিতাবের পাশাপাশি আল্লাহ তায়ালা রাসূল স. কেও পাঠিয়েছেন। তিনি কাদেরকে কুরআন শিখালেন
? শিখিয়েছেন আবু বকর উমরকে, শিখিয়েছেন উসমান ও আলী রা. কে। তাঁরা কি আরবী ভাষা জানতেন না ?
অবশ্যই জানতেন। তারা আরবী সাহিত্যের প-িত ছিলেন। তার পরও এদেরকে কুরআনের মর্মার্থ বুঝানোর
জন্য রাসুলুল্লাহ স. এর প্রয়োজন ছিল। দরকার ছিল আত্মশুদ্ধির জন্য নবীজির আগমনের।
দ্বীনী মাদরাসাসমূহ দ্বীনের কিল্লা
আমরা মুসাফির। চলার বাকে ঝড় তুফান আসবে। উত্তাল কলতান সাগরের শোভা। অভাব অনটন উলামায়ে
কেরামের নিত্য সঙ্গী। বিপদ ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা নবীগণের সুন্নত। সব সমস্যা উপেক্ষা করে উলামায়ে
কেরাম মাদ্রাসার সাথে জড়িয়ে থাকতে হবে। দ্বীনী শিক্ষা ইসলামী অধ্যায়ের সর্বোত্তম খেদমত। দ্বীনী মাদ্রাসা
গুলো বর্তমানে দ্বীন হেফাজতের কিল্লা। উলামায়ে কেরামের ইল্ম ও আমলে সংরক্ষণের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান। ইহ ও
পরকালের শান্তির বাগান।
আজকের হক বাতিলের সংঘাতে, বহুমুখী ষড়যন্ত্রের মোকাবিলায়, প্রগতির নামে দুর্গতির কালোছোঁয়ায়,
আধুনিকতার ধু¤্রজাল পরিহার করে একটি আদর্শ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণেরআন্দোলনে আলেমদের সজাগ হতে
হবে। হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি ও বিজয়ের মিথ্যা প্রতিযোগিতা বর্জন করতে হবে। মহানবী স. এর পরম
আদর্শ নিয়ে আকাবিরের অনুসৃত পথে এগিয়ে যেতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক। জামিয়া
তাওয়াক্কুলিয়া রেঙ্গার শত বার্ষিকী উপলক্ষে মুকুট প্রাপ্ত আলেমদের অনাগত ভবিষ্যৎ আরো সুন্দর হোক সফল
হোক। হেসে উঠুক আনন্দের ঝলমলে প্রভাত।
লেখক: কলামিষ্ট,গবেষক,মুহাদ্দিস ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বসুন্ধরা,ঢাকা।