বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
শেষরাতের কত ফযীলত, আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন,
যখন রাতের এক তৃতীয়াংশ বাকি থাকে এবং তিনি ঘোষণা করেন, ‘কে আমার কাছে চাইবে আমি তাকে তা দান করবো, কে আমার কাছে দোয়া করবে যার দোয়া আমি কবুল করব!
আমরা সবে কদর তালাশ করি এজন্য যে শবে কদরের রাতে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর পর থেকে ফজর পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দাদেরকে মাফ করার জন্য আসে দেওয়ার জন্য আসে। দিনের বেলা আসে না?
আসে এক দিন আসে আরাফাতের দিন। এ দিন আল্লাহ তাআলা 11:30 থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নিচে আসে বান্দাদেরকে মাফ করার জন্য।
আরাফাতের ময়দানে আমরা সবাই যেতে পারবো না, শবে কদর যেদিন মনে করেছি সেদিন শবে কদর নাও হতে পারে হতে পারে, যেদিন আল্লাহ তাআলা নেমেছে সেইদিন আমি কোনো গুরুত্ব দেইনি, যেদিন আমি গুরুত্ব দিয়েছি সেদিন আল্লাহ তাআলা হয়তো আসেননি। আরাফাতের দিন এবং শবে কদরের দাম হয় আল্লাহর আসার কারণে এবং বান্দাদেরকে মাফ করার কারণে। শবে কদর ঠিকমতো পাব কিনা জানি না আরাফাতের ময়দানে ও সকলেই যাওয়ার সুযোগ হবে না এজন্য রব্বুল আলামীন আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে বলে দিয়েছে আমি নিচের আসমানে আসবো তোমাদেরকে দেওয়ার জন্য মাফ করার জন্য আর এর ব্যবস্থা আল্লাহ তাআলা প্রতিদিনই করেছেন। আল্লাহ তাআলা রাতের শেষ তৃতীয়াংশে দুনিয়ার আসমানে এসে বলেন কেউ কি ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো যাকে আমি ক্ষমা করে দেব কেউ আমার কাছে রিজিক প্রার্থী আছো যাকে আমি রিযিক দেব।
তাহাজ্জুদ এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে পার্থক্য আছে তাহাজ্জুদের জন্য মুয়াজ্জিন আযান দেন না। আর বাকি নামাজের জন্য মুয়াজ্জিন আযান দেন, কিন্তু তাহাজ্জুদের জন্য আযান স্বয়ং আল্লাহ তাআলা নিজেই দেয়। ওলামায়ে কেরাম এবং ছাত্ররা বুঝবেন, اِذَا نُوْدِيَ ۰۰۹ দ্বারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ উদ্দেশ্য আর ينادي দাঁড়া তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য জার ফায়েল আল্লাহ তাআলা।
আমরা বোয়ালভী সাহেব হুযুরকে দেখেছি, একসময় তাঁর টাইফয়েড জ্বর হয়েছিল, যার কারণে তিনি শেষরাতে উঠতে পারতেন না। এরপরও তিনি বলেছেন ঘড়িতে এলার্ম দাও, আমরা এলার্ম দিয়েছি, পুরা রাত হুযুরের ঘুম হচ্ছে না, এলার্ম বাজার সাথে সাথে হুযুর পাদুটো বুকের দিকে নিয়ে আসতেন। আযান শেষ হলে আবার পা মেলে দিতেন।
হুযুর সুস্থ হওয়ার পর আমরা হুযুরকে বললাম, আপনি নিশ্চিত জানেন পড়তে পারবেন না, তারপরও শেষরাতে এলার্ম দিতে বলেছেন এবং এলাম বাজিয়ে নিয়েছিলেন আবার আযান শেষ হয়ে গেলে পাদুটি মিলিয়ে দিয়েছেন এরকম কেন হুযুর?
তখন হুযুর উত্তরে বললেন, বাবা তোমাকে যদি রাতে তোমার জামাতা ডাকে তুমি উঠবে না, মেম্বার সাহেব ডাকলে তুমি উঠবে না, কোনো মন্ত্রী মিনিস্টার ডাকলে তুমি উঠবে না? অবশ্যই উঠবে, তাহলে আমি কোনো বেক্কল যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই ডাকছে তাহাজ্জুদের সময় সেখানে কেন আমি ঘুমিয়ে থাকবো?
অন্যান্য নামাজের সময় মুয়াজ্জিন ডাকে সেই দেখে আমি সাড়া দিই আর আল্লাহ তাআলার ডাকে আমি কেন সাড়া দেব না? পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় আযান নিচের থেকে উপরের দিকে দেওয়া হয় আর তাহাজ্জুদ এর আযান ওপর থেকে নিচের দিকে দেওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সাধারণ মুসল্লিদের জন্য আর তাহাজ্জুদের নামাজ ভিআইপিদের জন্য সকল মুসল্লী ভিআইপিতে যেতে পারে না। কারণ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে রিয়া তথা লোকদেখানোর মনোভাব থাকতে পারে যে লোকেরা বলবে সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পারে আর তাহাজ্জুদের নামাজে লোক দেখানো মনোভাব নেই এবং লাভ নেই তাহলে দেখাবে কাকে?
শেষরাতে যাদেরকে দেওয়ার ইচ্ছা থাকে কেবল তাদেরকে আল্লাহ তাআলা জাগ্রত করে দেয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পাব সেটার কোনো গ্যারান্টি নেই। হাদীস শরীফে আছে, শেষরাতে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে বলে, অমুককে ঘুম থেকে জাগিয়ে দাও আর অমুককে ঘুমিয়ে থাকতে দাও এজন্য দেখা যায় বহু সময় এলার্ম ঠিকই কিন্তু এলার্ম দেওয়া সত্ত্বেও ঘুমাচ্ছি অথবা এলার্ম বন্ধ করে ঘুমাচ্ছি। তাহলে বুঝা গেল যে আমার কথা আল্লাহ তাআলা শুনতে পছন্দ করছেনা। রসুল (সা.) রাতে এত দীর্ঘক্ষণ জেগে নামাজে দাঁড়াতেন যে হুযুরের পা মোবারক ফুলে যেত। সাহাবায়ে করাম হুযুরকে জিজ্ঞাসা করতেন, হুযুর আপনার এত কষ্ট করার কি দরকার? আপনার তো সব গুনাহ মাফ করা হয়েছে। হুযুর বলেছেন, আমি কি আল্লাহর শুকরগুজার বান্দা হব না? তাহলে আমাকে শেষরাতে উঠার কারণে মাফ করে দিয়েছেন এখন যার কারণে আল্লাহ আমাকে মাফ করেছে সেটা কি আমি বাড়াবো নাকি কমাবো? অবশ্যই বাড়াবো।
হুযুর (সা.)-কে একবার জিজ্ঞাসা করা হল দোয়া কখন বেশি কবুল হয়?
হুযুর বললেন, শেষরাতে। অন্যান্য সময় আল্লাহ তাআলা থেকে আমরা তালাশ করি, আমাকে দাও আমাকে দাও আর শেষরাতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বলেন, বান্দা আমার থেকে নাও, বান্দা আমার থেকে নাও।
আল্লাহ তাআলা শেষরাতে গুনাহ মাফ করে এবং বান্দার যাবতীয় হাজত পূরণ করে সুতরাং আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শেষরাতের প্রতি এহতেমাম করার তওফিক দান করুন। আমীন আল-হামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামীন
আল্লামা মুফতি শামসুদ্দিন জিয়া সাহেব হুজুর দাঃবাঃ
আমরা জামিয়ার গর্বিত সন্তান পেইজ থেকে