বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
সত্য সন্ধানী মুসলিম ভাই বোনদের অবগতি ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুবিধার্থে জানানো যাচ্ছে যে, “খাদ্য বস্তু দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় কর” এমন কথা কোন সহীহ হাদীস শরীফে নাই। তবে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর জীবনকালে নির্ধারিত খাদ্য বস্তু দ্বারাই সদকাতুল ফিতর আদায় করা হতো।
কারণ, তখনকার সময় কাগজের কোন মুদ্রা ছিলনা। শুধুমাত্র দুই প্রকারের মুদ্রা মার্কেটে বিদ্যমান ছিল। ০১ নং স্বর্ণের তৈরী দিনার ০২ নং রূপার তৈরী দিরহাম। বর্তমান সময়ের মতো উচ্চ নিম্ন বিভিন্ন মানের মুদ্রা তখনকার সময় ছিলনা বিধায় এক দিনার কিংবা এক দিরহাম এর চেয়ে কম মানের কোন বস্তু ক্রয় করতে হলে বস্তুর বিপরীতে বস্তু দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ ছিলনা। এই জন্য বস্তুর পরিবর্তে বস্তু দ্বারা বেচা-কেনার অনেক দৃষ্টান্ত সহীহ হাদীস শরীফে পাওয়া যায়।
মহান আল্লাহ তা’আলা সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ যা নির্ধারণ করেছেন তা দিরহাম কিংবা দিনারের পরিমাণ থেকে কম। তখনকার সময় এক দিরহামের বিপরীতে একটি বকরি পাওয়া যেত বলে প্রসিদ্ধ আছে। এমতাবস্থায় তৎকালীন মুসলমানের জন্য বস্তু ছাড়া মুদ্রা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করার কোন সুযোগ বিদ্যমান ছিলনা বলে স্পষ্ট প্রতীয়মান। এই জন্য কতিপয় নির্ধারিত বস্তু দ্বারাই সদকাতুল ফিতর আদায় করার নিয়মই ছিল।
কালের পরিবর্তনে বিভিন্ন মানের মুদ্রা চালু হয়েগেলে দ্বিতীয় ওমর খ্যাত হযরত ওমর বিন আবদুল আযীয রহ., ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ., ইমাম আবু হানিফা রহ. ও ইমাম বোখারী রহ. এর মতো মহামনীষীগণ নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, “বস্তুর পরিবর্তে মুদ্রা দ্বারাও ফিতরা দেওয়ার নিশ্চিত সুযোগ আছে মুসলমান নর-নারীর জন্য”।
নিকট অতীতের মধ্যে আহলে হাদীস বন্ধুদের অবিসংবাদিত ইমাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং আল্লামা বিন ওছাইমীন রহমাতুল্লাহি আলায়হি দুজনই বস্তুর পরিবর্তে মুদ্রা বা টাকা দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করা বৈধ বলে সুনির্দিষ্ট মত প্রকাশ করেছেন।
সদ্য প্রয়াত আরব বিশ্বের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন, প্রখ্যাত ইমাম আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বস্তুর পরিবর্তে তার মূল্য আদায় করাকে উত্তম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
বিশ্ববিখ্যাত দারুল উলূম দেওবন্দ এর সম্মানিত মুফতি সাহেবগণ সংশ্লিষ্ট হাদীস শরীফ সমূহের বাস্তব প্রেক্ষাপটের আলোকে অভাবীদের সার্বিক সুবিধার্থে সর্বসম্মত ফতওয়া প্রদান করেছেন যে, “সদকাতুল ফিতর বস্তুর পরিবর্তে মূল্য প্রদান করারও সুযোগ আছে।”।
والله أعلم بالصواب
আসল বিষয় মহান আল্লাহ তা’আলাই বেশি জানেন।
সম্পাদনায়
মুহাম্মদ কিফায়তুল্লাহ শফিক
খাদিমে দারুল ইফতা
আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া টেকনাফ
ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, কক্সবাজার, বাংলাদেশ।
মোবাইল : ০১৮১৭০০৯৩৮৩
হোয়াটসঅ্যাপ : ০১৮৬৮৫১৫১৫১
তারিখ : 26 শে রমাযানুল মুবারক 1444হিজরী
মুতাবিক 18/04/2023খ্রিষ্টাব্দ