ইসলামই একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার মনোনীত ধর্ম। পবিত্র কুরআন মজিদ সর্বকালের সর্বজনের সর্বশ্রেষ্ঠ একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। মানবজাতির ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে জীবনের সকল ক্ষেত্রের এমন কোন সমস্যা নেই যার যথাযথ সমাধান এতে বর্ণিত হয়নি। বর্তমানে নেশা, মাদকদ্রব্য ও মাদকাসক্তি বিশ্বজুড়ে এক মহা আতঙ্ক। আধুনিক সভ্যতার মহা সর্বনাশী ভয়ঙ্কর সংক্রামক ব্যাধি। মানুষের শান্তি ও সুখময় জীবনে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে পড়ার মহান হাতিয়ার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্বের ৭৬ মিলিয়ন মানুষ মাদকদ্রব্য সেবনের ফলে সৃষ্ট বিভিন্ন কঠিন রোগে আক্রান্ত এবং বিশ্বের সব রোগ-ব্যাধির ৩.৫ শতাংশ মদপানজনিত। মাদকাসক্তি ব্যক্তি শারিরীক নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হওয়া সহ অসামাজিক ও অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে মাদকাসক্তি যেমন একটি চরম অপরাধ, তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও এটি একটি জঘন্যতম পাপাচার। তাই সমাজে মহামারী রূপ ধারণ করা চরম ঘৃণ্য এ বস্তুর সেবন, বাণিজ্য, ব্যবহার ও বিস্তার রোধে সক্ষম না হলে, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি ক্রমান্বয়ে ধ্বংসের আতলে বিলিন হয়ে যাবে।
এই জন্যেই এ ঘৃণিত ও বর্জনীয় বস্তুর সাথে সকল প্রকারের সংশ্লিষ্টতাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে দ-প্রাপ্ত আসামীর কাটগড়ায় দাঁড় করিয়েছে।
পবিত্র কুরআন-হাদীসের দৃষ্টিতে মদ ও মাদকদ্রব্য : আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ (۹۰) إِنَّمَا يُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَعَنِ الصَّلَاةِ فَهَلْ أَنْتُمْ مُنْتَهُونَ (۹۱) (المائدة: ۹۰، ۹۱)
“হে মু’মিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তি পূঁজার দেবি ও ভাগ্য নির্ণয়ক স্বর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কাজ। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর, তাহলে তোমরা সফলকাম হতে পারবে। শয়তান তো মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্ধেষ ঘটাতে চায় এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে (নামাযে) বাধা দিতে চায়। তবে কি তোমরা নিবৃত্ত হবে না?”- (মায়িদা-৯০-৯১)।
এ আয়াতে মাদক সম্পর্কে চূড়ান্ত বিধান দেওয়া হয়েছে এবং একে ঘৃণ্য ও বর্জনীয় ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয় একে উল্লেখ করা হয়েছে পূজার বেদীর সাথে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যখন শরাব হারাম করা হল তখন আল্লাহর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীগণ একে অপরের কাছে গিয়ে বললেন, ‘শরাব হারাম হয়েছে এবং একে শিরকের মতো (মারাত্মক গুনাহ) সাব্যস্ত করা হয়েছে।’
حُرِّمَتِ الخْمَر وَجُعِلَتْ عَدلا للشرك، قال المنذري : رواه الطبراني، ورجاله رجال الصحيح
(আত তারগীব ওয়াত তারহীব ৩/১৮০ হাদীস (৩৫৭৬)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের এক হাদীস শরীফে এসেছে-
كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
“সকল নেশা সৃষ্টিকারী দ্রব্য হারাম।”
এটি একটি ‘মুতাওয়াতির’ হাদীস। মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় ‘মুতাওয়াতির’ ঐ সকল হাদীসকে বলে, যা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত, যা এত সংখ্যক ‘রাবী’র সূত্রে বর্ণিত যে, এতে কোনো প্রকারের সন্দেহ-সংশয়ের অবকাশ থাকে না। বিখ্যাত হাদীস বিশারদ আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) (৮৫২ হি.) বলেন, এ-মর্মে হাদীস একত্রিশজন হযরাত সাহাবা-ই কিরাম (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে। (দ্র. ফতহুল বারী ৩/৭৩)
#অপর এক হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মাদক সেবী, মাদক ব্যবসায়ী সহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট দশজন ব্যক্তির উপর মহান আল্লাহ তা‘আলার অভিশাপের কথা বলেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
عَن ابنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيهِ وَسَلمَ : لَعَنَ اللَّهُ الْخَمْرَ وَشَارِبَهَا وَسَاقِيَهَا وَبَائِعَهَا وَمُبْتَاعَهَا وَعَاصِرَهَا وَمُعْتَصِرَهَا وَحَامِلَهَا وَالْمَحْمُولَةَ إِلَيْهِ (رواه ابوداؤود) وفي رواية للترمذى : وآكِلَ ثَمَنِهَا
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেন (১) মদের উপর (২) পানকারী (৩) মদ পরিবেশন ও সরবরাহকারী (৪) ক্রেতা (৫) বিক্রেতা (৬) যে লোক নির্যাস বের করে তথা প্রস্তুত বা উৎপাদন করে (৭) যার জন্য প্রস্তুত বা আমদানী করা হয় (৮) বহনকারী ও আমদানী কারক (৯) যার জন্য বহন বা আমদানী করা হয়- তিরমিযী শরীফের এক বর্ণনায় এসেছে (১০) মাদক বিক্রয়লব্ধ অর্থ ভোগকারীর তথা লভ্যাংশভোগীর উপরও অভিশাপ। (আবু দাউদ শরীফ-৩৬৭৬, তিরমিযী শরীফ-১২৯৫)।
# অপর এক হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اجْتَنِبُوا الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ “
“তোমরা মদ থেকে দূরে থাকবে। কেননা মদ সমস্ত অকল্যাণের চাবি”-(কানযুল উম্মাল)।
# আরেক হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عَن عُثمَانَ رَضِيَ اللهُ عَنهُ أنَّه قَال : اجْتَنِبُوا الخَمْرَ فَإِنَّها أُمُّ الخَبَائِثِ (رواه النسائي)
“তোমরা সর্বপ্রকার মাদক দ্রব্য পরিহার কর। কেননা তা হচ্ছে সমস্ত পাপের উৎস”- (কানযুল উম্মাল-৫ম)।
# আরেক হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
عن ابن عباس رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه و سلم قال: لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مُدْمِنُ الْخَمَرِ
“মদপানকারী ব্যক্তি জান্নাতে যাবে না।” হযরত কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, মদপানকারী ব্যক্তি জান্নাতের সুবাসও পাবে না।”-(ত্বাবরানী শরীফ)
মাদকদ্রব্য গ্রহণের শাস্তি : মাদকদ্রব্য প্রাকৃতিক হোক যেমন, তাড়ি, আফিম, গাঁজা অথবা রসায়নিক হোক যেমন- হেরোইন, কোকেন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ইত্যাদি। পরিমাণে কম হোক বা বেশি হোক পান বা আহার কিংবা অন্য কোনোভাবে প্রহণ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম।
মদ্যপান ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে কঠিন গুনাহ এবং ফৌজদারী অপরাধরূপে গণ্য। কিন্তু পবিত্র কুরআনে এর শাস্তির কথা উল্লেখ নেই। তবে হাদীসের ভিত্তিতে ফকীহগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, মদ্যপায়ীর শাস্তি হচ্ছে ‘দোররা’ তথা বেত্রাঘাত। যদি কারো মদ পান করার বিষয়টি যথানিয়মে প্রমাণিত হয় তবে তাকে সেবনের পরিামাণ যাই হোক না কেন আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে।
এ বেত্রাঘাত সমূহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারা হবে। বেত্রাঘাতের ক্ষেত্রে মাথা, মুখমণ্ডল ও সংবেদনশীল জায়গায় করা যাবে না। প্রসিদ্ধ বর্ণনা মতে দণ্ডাদেশ জারী করার সময় লজ্জাস্থান ছাড়া সর্বাঙ্গে বিবস্ত্র করে তা প্রয়োগ করবে। (আলমগীরী : ২য় খ- : পৃ. ১৬০)
# হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মাদক সেবনের অপরাধে খেজুরের ডাল ও জুতা দিয়ে আঘাত করেন। আর আবু বকর (রা.) ৪০টি বেত্রাঘাত করেন। অতঃপর উমর (রা.) যখন খলিফা হন, তিনি লোকদের ডেকে বলেন, অনেক লোক পানির উৎসগুলোতে ও গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এখন আপনারা মাদক গ্রহণের ‘হদ’ প্রসঙ্গে কী বলেন? তখন আবদুর রাহমান ইবনে আউফ (রা.) বলেন, আমরা হদের আওতায় লঘু শাস্তি দেওয়ার মত দিচ্ছি। সুতরাং তিনি এর শাস্তি হিসেবে ৮০টি বেত্রাঘাত নির্ধারণ করেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৭৯)
দণ্ড জারির বিধান ও শর্ত : দুজন সৎ ও নিষ্ঠাবান পুরুষ সাক্ষী যদি কারো বিরুদ্ধে আদালতে মাদকদ্রব্য গ্রহণের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয়, তখন বিচারক প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ করবেন যে, কখন ও কোথায় মাদক গ্রহণ করেছে, ইচ্ছাকৃত নাকি উপায়হীন চাপে পড়ে ইত্যাদি। নিশ্চিত হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তির উপর শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দ- প্রয়োগ করা হবে। অথবা মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তি সুস্থ মস্তিষ্কাবস্থায় নিজে মাদক গ্রহণ স্বীকার করে তাকে শরয়ী দ-বিধির আওতায় এনে দ- প্রয়োগ করা হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ২/১৫৯)
#সাক্ষীর নির্ধারিত সংখ্যা ও শর্ত পূরণ না হলে ‘হদ’ তথা শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগ করা যাবে না। তবে যদি নির্ভরযোগ্য অন্য কোনো মাধ্যমে মাদকদ্রব্য সেবনের প্রবল ধারণা হয়, সে ক্ষেত্রে ‘তা‘জির’ তথা সাধারণ অনির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হবে (ফাতাওয়ায়ে উসমানি : ৩/৫৩৯)
#কাউকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তবে মাদকদ্রব্য গ্রহণের সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তাহলে তার উপর ‘হদ’ তথা শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দ- প্রয়োগ করা যাবে না। বরং এ ক্ষেত্রেও ‘তা‘জির’ তথা সাধারণ অনির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। (রদ্দুল মুখতার : ৪/৩৯)
মাদকদ্রব্যের ব্যবসা : মুসলিমদের জন্য মদ, হেরোইন ও অন্যান্য মাদকদ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় করা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মদপান, তা ক্রয়-বিক্রয় ও এর বিনিময় হারাম করেছেন।’ (মুসনাদে আবি হানিফা, হাসকাফির বর্ণনা, হাদিস : ৩৫)
#তবে যার কাছে বা ঘরে অথবা দোকানে মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়, কিন্তু মদপান প্রমাণিত হয়নি, তার উপর ‘হদ’ তথা শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত দণ্ড প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ‘তাজির’ তথা সাধারণ অনির্ধারিত শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান সার্বিক বিবেচনায় এদের উপর কঠিন থেকে কঠিনতর শাস্তি প্রয়োগ করতে পারেন। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ৩/৩৯, রদ্দুল মুহতার : ৪/৩৯)
মাদক গ্রহণে মৃত্যুদণ্ড : একটি হাদীস শরীফে চতুর্থবার মদপানে লিপ্ত হলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান বর্ণিত হয়েছে। এ বিষয়ে আলেমদের অভিমত হলো, এ হাদীস শরীফের বিধান রহিত হয়ে গেছে। হাদীস শরীফটি হলো- হযরত মু‘আবিয়া (রা.) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মদপান করে, তাকে চাবুকপেটা করো। যদি সে চতুর্থবার মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তাকে মেরে ফেলো।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৮২, তিরমিজি, হাদিস : ১৪৪৪)
#ইমাম তিরমিযী (রহ.) হাদীস শরীফটির ব্যাখ্যায় বলেন, আমি হযরত ইমাম বুখারী (রহ.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি, তিনি আরো বলেছেন, আগে মদপানকারীর মৃত্যুদ-ের বিধান ছিল, পরে তা বাতিল করা হয়েছে। অনেক ইসলামী আইনবিদ মনে করেন, যদিও ‘হদ’-এর ক্ষেত্রে বিধানটি রহিত, তবে মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধান সার্বিক বিবেচনায় ভালো মনে করলে মাদকদ্রব্য নির্মূলে ‘তা‘জির’ হিসেবে এরূপ ব্যক্তিকে মৃত্যুদ-াদেশ দিতে পারবেন। এ-বিবেচনায় জনসাধারণের কল্যাণে দেশ থেকে মাদকদ্রব্য নির্মূলের উদ্দেশ্যে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের ব্যাপক প্রসারকারীকে রাষ্ট্রপ্রধান মৃত্যুদ-াদেশ দিতে পারবেন। (আল আরফুশ শাজি : ৩/১৩৬, আত-তাশরিউল জিনাঈ : ১/৬৮৮)
তবে এখানে অবশ্যই স্মর্তব্য যে, এ আদেশ যেন দেশ ও জনসাধারণের কল্যাণেই হয়ে থাকে, অযথা নিজস্ব স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য না হয়। পাশাপাশি নির্দোষ ও নিরীহ জনগণ যেন জুলুমের শিকার না হয়।
#এককথায় ইসলামে মাদকদ্রব্যের সেবন ও ব্যবসা অত্যন্ত কঠিন পাপকর্ম। চরমভাবে ঘৃণিত ও বর্জনীয়। এটি এমনই ঘৃণিত বস্তু যে, এর উৎপাদন, বিপণন পরিবেশন ও গ্রহণ যেকোনো পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্টতা সর্ববিনাশি ও সর্ব বিধ্বংসী। দুনিয়া-আখিরাতের সকল অকল্যাণের উৎস ও মূল। তাই আমাদেরকে এ গর্হিত বস্তুর সর্বনাশা ছোবল থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু কীভাবে?
#সকল পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তির একমাত্র মূলমন্ত্র ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করা ব্যতীত অন্য কোনো বিকল্প নেই। সকল জনসাধরণের মাঝে তাক্বওয়া ও আল্লাহভীতি সঞ্চারণের প্রয়াস চালানো প্রয়োজন। অপরাধ ও অপরাধ প্রবণতা সমূলে উপড়ে ফেলতে জনসাধরণের মাঝে এমন অব্যর্থ দাওয়া-ই প্রয়োগ করা চায় যার কার্যকারিতা চিরন্তন, চিরপরীক্ষিত। আর সেই মহৌষধটি হচ্ছে তাক্বওয়া ও আল্লাহভীতি। বস্তুত: যে ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহভীতি সঞ্চারিত থাকে সে কখনো ছোট-বড় কোনো পাপকর্মে আসক্ত হয়ে পড়তে পারে না। যদিও কখনও দুর্ঘটনা বশত: কোনো পাপকর্মে জড়িয়ে পড়ে তবে আল্লাহর মেহেরবানীতে অচিরেই তাওবা করে ফিরে আসে চির শাশ্বত পথে।
বিশেষত: নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে চাইলে তাদেরকে এ বোধের সাথে পরিচিত করতেই হবে এবং আমাদের শিক্ষা কারিকুলামে সাধরণ শিক্ষার পাশাপাশি তাক্বওয়া শিক্ষারও ব্যবস্থা রাখতে হবে। আর সর্বসাধারণের ক্ষেত্রে শক্তিশালী দাওয়াতি কর্মসূচির মাধ্যমে “আমর বিল মা‘রুফ ও নাহি আনিল মুনকার” তথা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ-এর কাজ জাগ্রত করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের ধর্ম মন্ত্রণালয় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে। ঈমানী তারবিয়্যত ও আখিরাতমুখী জীবনবোধের পাশাপাশি মাদক নিরোধে কোনো শৈথিল্য প্রদর্শন না করে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা চায়।
#পরিশেষে আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলতে চাই, বুঝে হোক না বুঝে হোক যারা এমন গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে গেছেন তাদেরকে খাঁটি মনে তাওবাহ করার সুযোগ দেয়া হোক। মহান আল্লাহ তা‘আলা সকল পাপীদের ব্যাপারে তাওবাহের বিধান রেখেছেন এবং প্রকৃত তাওবাকারীগণকে নিষ্পাপতুল্য ঘোষণা করেছে। এতে করে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, দেশ ও রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহু তা‘আলা।
মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলের সহায় হোন।
………………………………………………………….
মুহ্তামিম ও শায়খুল হাদীস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া টেকনাফ।
সম্পাদক, দৈনিক সাগরদেশ কক্সবাজার ও মাসিক আল-আবরার ঢাকা।