এমন কে আছে যে নিজের পরিবার-পরিজনের খাবার-দাবারের বন্দোবস্ত করার চিন্তা-ফিকির করে না? গুটি কয়েক অনুভূতিহীন ও উদাসীন ব্যক্তি ছাড়া প্রায় সকলেই তাদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সচ্ছল জীবন-যাপনের জন্য দৌড়-ঝাপ ও মরিয়া হয়ে উঠে, উদার মনে অকুণ্ঠচিত্তে নিঃসঙ্কোচে খরচ করতে থাকে। কিন্তু নিজ পরিবার-পরিজনের বৈধ প্রয়োজন মেটানোর জন্য অর্থব্যয়, টাকা-পয়সা খরচ করাও যে অনেক বড় ছাওয়াব ও নেকীর কাজ, তা খুব কম লোকেরই জানা আছে। আরো আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, পরিবার-পরিজনের অনেকের ব্যয়ভার তো থাকছে ক্ষেত্রবিশেষ ও নির্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত। কিন্তু নিজ অর্ধাঙ্গীনি যার ভরণ-পোষণ আমৃত্যুই থাকছে নিজ কাঁধে, যা একটি অবশ্য পালনীয় ফরয বিধান। কী অপূর্ব কথা! তার জন্য কৃত ব্যয় এমন কি তার মুখে যে খাবার তুলে দেওয়া হয়, তাতেও পেয়ে যাচ্ছে সদ্কার ছাওয়াব।
‘সুব্হানাল্লাহ্!’
‘কী তাজ্জব ব্যাপার!’
‘মানুষ স্বভাবগতভাবে যে কাজ বিবেকের তাড়নায়ই পুরো করে থাকে, তাতেও এতো ছাওয়াব?’
‘হ্যাঁ, আবশ্যই ছাওয়াব।’
‘যদি একটু নিয়্যতের গতি পাল্টে দেয়া যায়।’
‘কেমন করে?’
আপনি কারো পিতা হলেন, কোনো মেয়ে লোকের স্বামী হলেন কিংবা কারো অভিভাবক হলেন। আপনার অধীনস্থ পরিবারবর্গের খোর-পোষ আপনার উপর অত্যাবশ্যকীয় ফরয। অবশ্যই আপনাকে তাদের বৈধ প্রয়োজন মেটাতে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। নচেৎ দুনিয়া-আখিরাতের সর্ব আদালতে আপনাকে হতে হবে দোষী। অপরাধী। মহান আল্লাহ্ কতো দয়াবান! আপনার উপর অর্পিত এই কর্তব্য পালন কালে যদি এই নিয়্যত থাকে যে, আল্লাহ্ তা’আলা আমার উপর তাদের হক ও অধিকার আরোপ করেছেন, তাই আমি তাঁর হুকুম পালন ও তাঁর সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য তাদের পেছনে ব্যয় করছি। এ-রকম নিয়্যত করাতে প্রতিটি খরচের জন্য জমা হবে আপনার আমলনামায় সদ্কার ছাওয়াব।
‘আল্লাহু আকবার!’
‘কী অপার অনুগ্রহ ও অশেষ দয়া আল্লাহ্ তা’আলার!’
‘আসলে তাঁর করুণা ও দয়ার শেষ নেই।’
মহান আল্লাহ্ কতো মহানুভব! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের হাদীস শরীফ মতে গতানুগতিক করা হয় এমন একটি কাজে সামান্য নিয়্যতের গতি পাল্টানোর কারণে এতোই ছাওয়াব ও প্রতিদানের উপকরণ বানিয়ে দিয়েছেন, যা সদ্কার অন্যান্য খাতসমূহ থেকেও বেড়ে যাচ্ছে।
এবার দেখে নিন রাসূলুল্লাহ সা.-এর হাদীস শরীফ-
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِـيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، قَالَ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ: دِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ فِيْ رَقَبَةٍ، وَدِينَارٌ تَصَدَّقْتَ بِه عَلٰى مِسْكِيـْن،ٍ وَدِينَارٌ أَنْفَقْتَهُ عَلٰى أَهْلِكَ، أَعْظَمُهَا أَجْرًا الَّذِيْ أَنْفَقْتَهُ عَلٰى أَهْلِكَ. (رواه مسلم)
অনুবাদ : হযরত আবূ হুরায়রাহ্ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “এক দীনার হচ্ছে যা তুমি আল্লাহ্র পথে তথা জিহাদে ব্যয় করে থাক। আর এক দীনার হচ্ছে, যা তুমি গোলাম আযাদ (মুক্ত) করার কাজে ব্যয় করে থাক। আর এক দীনার হচ্ছে, যা তুমি ফকীর-মিসকীনকে দান করে থাক। আর আরেকটি দিনার হচ্ছে, যা তুমি আপন পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে থাক। এসব দীনারের মধ্যে সবচে’ বেশি ছাওয়াব ওই দীনারের, যা তুমি আপন পরিবার-পরিজনের জন্য ব্যয় করে থাক। (মুসলিম শরীফ : ৩/৭৮, হাঃ ২৩৫৮)
আরো একটি হাদীস শরীফ-
عَنْ سَعَدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِـيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ، أَنَّهُ أَخْبَـرَهُ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِﷺ قَالَ: إِنَّكَ لَنْ تُنْفِقَ نَفْقَةً تَبْتَغِيْ بـِهَا وَجْهَ الله،ِ إِلَّا أُجِرْتَ عَلَيْهَا حَتّٰى مَا تـَجْعَلُ فِيْ فِيْ اِمْرَأَتِكَ.
(رواه البخاري ومسلم واللفظ للبخاري)
অনুবাদ : হযরত সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বর্ণনা করেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- “তুমি আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যা কিছু ব্যয় করবে, তার ছাওয়াব তুমি পাবে। এমন কি তোমার স্ত্রীর মুখে যে খাবার তুলে দাও তার জন্যেও তুমি ছাওয়াব পাবে।” (বুখারী শরীফ : ১/৩০, হাঃ ৫৬, মুসলিম শরীফ : ৫/৭১, হাঃ ৯২৯৬)
সংগৃহীত
নেকীর পাহাড়, পৃষ্ঠা নং : ১০৭
গ্রন্থনায় :
মুফতি কিফায়তুল্লাহ শফিক
মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস, আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া টেকনাফ
তারিখ : ০৪/০৪/ ২০২৩ ইংরেজী