‘পবিত্র কুরআনে করীম’ পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ। বিশ্বমানবতার মুক্তি ও সত্যের পথ দেখাতেই হয়েছে পবিত্র কুরআনের অবতরণ। সব ধরনের জ্ঞান-বিজ্ঞানের আধার এ-মহাগ্রন্থ। এর অধ্যয়ন, অনুধাবন ও অনুসরণের মধ্যেই নিহিত রয়েছে মানবের কল্যাণ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
وَمَا هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِيْنَ٥٢ [القلم]
‘কুরআন তো বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ বৈ আর কিছু নয়।’ (সূরা আল-কলম: ৫২)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে,
لَقَدْ أَنْزَلْنَا إِلَيْكُمْ كِتَابًا فِيْهِ ذِكْرُكُمْ أَفَلَا تَعْقِلُون١٠﴾ [الأنبيا]
‘আমি তোমাদের প্রতি এমন একটি কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমাদের জন্যে উপদেশ রয়েছে; তবু কি তোমরা কি বুঝবে না?।’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ১০)
মানব জাতির কল্যাণের আকর এ গ্রন্থ আমাদের বেশি বেশি পাঠ করা উচিত, নচেৎ আমরা এর উপদেশাবলী গ্রহণ করতে পারব না। মহান আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ কুরআনে করীমকে বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা প্রত্যেক মুসলামান নর-নারীর উপর ফরজ। বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করার গুরুত্ব অপরিসীম। কুরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল করীমে ইরশাদ করেন,
﴿إِنَّ الَّذِيْنَ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللّٰهِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنْفَقُوْا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَّعَلَانِيَةً يَّرْجُوْنَ تِجَارَةً لَنْ تَبُوْرَ٢٩ لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُوْرَهُمْ وَيَزِيْدَهُمْ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّهُ غَفُوْرٌ شَكُوْرٌ٣٠﴾ [فاطر]
‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, নামায কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসা আশা করে, যাতে কখনো লোকসান হবে না। পরিণামে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা তাদের সওয়াব পুরোপুরি দেবেন এবং স্বীয় অনুগ্রহে তাদের ধারণাতীত অনেক বেশি দিবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী।’ (সূরা ফাতির: ২৯, ৩০)
অন্যত্রে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
﴿الَّذِيْنَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَتْلُوْنَهُ حَقَّ تِلَاوَتِهِ أُوْلَئِكَ يُؤْمِنُوْنَ بِهِ وَمَنْ يَّكْفُرْ بِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْخَاسِرُوْنَ١٢١﴾ [البقرة: ]
‘আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি, তারা তা যথাযথভাবে পাঠ করে। তারাই তৎপ্রতি বিশ^াস করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে, তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।’
(সূরা আল-বাক্বারা: ১২১)
আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কুরআন মজীদ তিলাওয়াতে তাওফীক লাভ করা ইর্ষণীয় সৌভাগ্য। পবিত্র হাদীস শরীফে কুরআন তিলাওয়াতের ফযীলত ও এর প্রতি গুরুত্বারোপ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদীস শরীফ বর্ণিত রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো:
১. দু’জন ব্যক্তির আমল খুবই ঈর্ষণীয়:
عَنِ ابْنِ عُمَر، قَالَ: أَنَّ النَّبِيَّ ^ قَالَ: ্রلَا حَسَدَ إِلَّا فِيْ اثْنَتَيْنِ: رَجُلٌ آتَاهُ اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَقُومُ بِهِ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِ، وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَهُوَ يُنْفِقُهُ آنَاءَ اللَّيْلِ وَآنَاءَ النَّهَارِগ্ধ. (رواه البخاري والترمذي)
‘হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘দু’ব্যক্তি ছাড়া আর কারও উপর ঈর্ষা করা যায় না। এক. ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা’আলা কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের তাওফীক দিয়েছেন এবং সে দিন-রাত কুরআন তিলাওয়াত করে থাকে। দ্বিতীয় ঐ ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তা‘আলা প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং সে তা হতে (আল্লাহর রাস্তায়) খরচ করতে থাকে।’’ (সহীহ বুখারী ও সুনানে তিরমিযী শরীফ)
২. কুরঅন তিলাওয়াতকারীকে অকল্পনীয় মর্যাদায় ভূষিত করা হবে:
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو ، عَنْ النَّبِيِّ ^ قَالَ: ্রيُقَالُ لِصَاحِبِ الْقُرْآنِ اقْرَأْ وَارْتَقِ وَرَتِّلْ كَمَا كُنْتَ تُرَتِّلُ فِي الدُّنْيَا، فَإِنَّ مَنْزِلَتَكَ عِنْدَ آخِرِ آيَةٍ تَقْرَأُ بِهَا. (رواه الترمذي)
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘(কিয়ামতের দিন) কুরআন ধারণকারীকে বলা হবে, তুমি পড় এবং আরোহণ করতে থাক। আর তুমি দুনিয়াতে যেমন ধীরে ধীরে পাঠ করতে অনুরূপভাবে ধীরে ধীরে পাঠ করতে থাক। যে আয়াত তোমার পাঠ শেষ হবে সেখানেই তোমার স্থান হবে।’’ (সুনানে তিরমিযী শরীফ)
৩. কুরআন তিলাওয়াতের দৃষ্টান্ত:
عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله ্مَثَلُ الْـمُؤْمِنِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الأُتْرُجَّةِ، طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَرِيْحُهَا طَيِّبٌ، وَمَثَلُ الْـمُؤْمِنِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ التَّمْرَةِ، طَعْمُهَا طَيِّبٌ وَلَا رِيْحُهَا، وَمَثَلُ الْـمُنَافِقِ الَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الرَّيْحَانَةِ، رِيْحُهَا طَيِّبٌ وَطَعْمُهَا مُرٌّ، وَمَثَلُ الْـمُنَافِقِ الَّذِيْ لَا يَقْرَأُ الْقُرْآنَ كَمَثَلِ الْـحَنْظَلَةِ، طَعْمُهَا مُرٌّ وَلَا رِيْحٌ لَـهَا. (رواه البخاري)
‘হযরত আবু মুসা আল-আশ’আরী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ লেবুর ন্যায়, যা খেতেও সুস্বাদু এবং ঘ্রাণও সুগন্ধিযুক্ত। আর যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ খেজুরের ন্যায় যা খেতে সুস্বাদু কিন্তু তাতে সুগন্ধি নেই। আর যে ফাসেক ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে তার উদাহরণ হচ্ছে রায়হানা জাতীয় ফলের ন্যায়, যা খুবই সুগন্ধি আছে কিন্তু খেতে একেবারে বিস্বাদযুক্ত। আর যে ফাসেক একেবারে কুরআন পাঠ করে না তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ হাঞ্জালা (মাকাল ফল) জাতীয় ফলের ন্যায়, যা খেতেও বিস্বাদ এবং তাতে কোন সুগন্ধিও নেই।’’ (সহীহ বুখারী শরীফ)
৪. কুরআন তিলাওয়াতকারী বিনা প্রার্থনায় প্রার্থনাকারীর চেয়েও বেশি পায়:
عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْـخُدْرِيِّ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ^: ্قُولُ الرَّبُّ مَنْ شَغَلَهُ الْقُرْآنُ عَنْ ذِكْرِيْ عَنْ مَسْأَلَتِيْ أَعْطَيْتُهُ أَفْضَلَ مَا أُعْطِي السَّائِلِيْنَ، وَفَضْلُ كَلَامِ اللهِ عَلَىٰ سَائِرِ الكَلَامِ كَفَضْلِ اللهِ عَلَىٰ خَلْقِهِগ্ধ. (رواه الترمذي)
‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান রাব্বুুল ইজ্জত বলেন, ‘কুরআন (চর্চার ব্যস্ততা) যাকে আমার যিকির ও আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করতে বিরত রেখেছে আমি তাকে আমার কাছে যারা চায় তাদের চেয়ে অনেক উত্তম পুরস্কার দিব। সব কালামের উপর আল্লাহর কালামের মর্যাদা এত অধিক যেমন আল্লাহর মর্যাদা তাঁর সকল সৃষ্টির উপর।’ (তিরমিযী শরীফ)
৫. কুরআন মানুষকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয়:
عَنْ جَابِرٍ য، عَنِ النَّبِيِّ ^، قَالَ: ্রالْقُرْآنُ شَافِعٌ مُشَفَّعٌ وَمَاحِلٌ مُّصَدَّقٌ مَنْ جَعَلَهُ أَمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْـجَنَّةِ وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ سَاقَهُ إِلَى النَّارِগ্ধ. (رَوَاهُ ابْن حِبَّانَ)
‘হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কুরআনে পাক এমন এক সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবূল করা হয়েছে এবং এমন এক বিতর্ককারী যার বিতর্ক মেনে নেওয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি কুরআনকে সম্মুখে রাখে তাকে সে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আর যে কুরআনকে পিছনে ফেলে সে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করে।’’ (সহীহ ইবনে হিব্বান)
৬. একটি আয়াত তিলাওয়াত এক’শ রাকাআত নফল নামাযের চেয়েও উত্তম:عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ، قَالَ: قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ ^: ্يَا أَبَا ذَرٍّ! لأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ آيَةً مِنْ كِتَابِ اللهِ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ مِئَةَ رَكْعَةٍ، وَلَأَنْ تَغْدُوَ فَتَعَلَّمَ بَابًا مِنَ الْعِلْمِ عُمِلَ بِهِ أَوْ لَـمْ يُعْمَلْ خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ تُصَلِّيَ أَلْفَ رَكْعَةٍ. (رواه ابن ماجة باسناد حسن)
‘হযরত আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘হে আবু যর! তুমি যদি সকাল বেলায় গিয়ে কালামুল্লাহ শরীফের একটি আয়াত শিক্ষা কর তবে তা একশত রাক‘আত নফল নামায হতে উত্তম। আর যদি ইলমের একটি অধ্যায় শিক্ষা কর, চায় তার উপর আমল করা হোক বা না হোক তবে তা হাজার রাক‘আত নফল নামায হতে উত্তম।’’ (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ)
৭. দুনিয়ার নূর আখিরাতের সঞ্চয়:عَنْ أَبِيْ ذَرٍّ قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ أَوْصِنِيْ، قَالَ ^: ্রعَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ، فَإِنَّهَا رَأْسُ الْأَمْر كُلِّهِ قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! زِدْنِيْ، قَالَ: ্রعَلَيْكَ بِتِلَاوَة الْقُرْآنِ، فَإِنَّهُ نُوْرٌلَكَ فِي الْأَرْضِ، وَذُخْرٌ لَّكَ فِي السَّمَاءِ ( رَوَاهُ ابْنُ حِبَّانَ )
‘হযরত আবু যর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট দারখাস্ত করলাম যে, আমাকে কিছু নসীহত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তাকওয়া অবলম্বন কর, কারণ তা সমস্ত নেক আমলের মূল।’ আমি আরজ করলাম, আরও কিছু নসীহত করুন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কুরআন তিলাওয়াতের এহতেমাম কর। কারণ, তা দুনিয়াতে তোমার জন্য নূর এবং আখেরাতে সঞ্চিত ধন-ভা-ার।’’ (সহীহ ইবনে হিব্বান)
৮. এমন একটি আমল যা স্বয়ং আল্লাহ পাক কান লাগিয়ে শুনেন:عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ الْأَنْصَارِيِّ، قَالَ: قَال رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: للهُ أَشَدُّ أَذَنًا لِلرَّجُلِ الْـحَسَنِ الصَّوْتِ بِالْقُرْآنِ مِنْ صَاحِبِ الْقَيْنَةِ إِلَى قَيْنَتِهِ. (رواه ابن ماجة وابن حبان)
‘হযরত ফাযালা ইবনে উবাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা কুরআন তিলাওয়াতকারীর আওয়াজ ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক মনোযোগের সাথে শ্রবণ করেন, যে আপন গায়িকা বাঁদীর গান কান লাগিয়ে শ্রবণ করে।’’ (ইবনে মাজাহ ও ইবনে হিব্বান শরীফ)
৯. কুরআন তিলাওয়াতে অন্তরের মরিচা দূরীভূত হয়:
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ هَذِهِ الْقُلُوْبَ تَصْدَأُ، كَمَا يَصْدَأُ الْـحَدِيْدُ إِذَا أَصَابَهُ الْـمَاءُগ্ধ، قِيْلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، وَمَا جِلَاؤُهَا؟ قَالَ: كَثْرَةُ ذِكْرِ الْـمَوْتِ وَتِلَاوَةُ الْقُرْآنِ. (رواه البيهقي)
‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের অন্তরেও মরিচা পড়ে যায়। জিজ্ঞাসা করা হল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তা পরিষ্কার করার উপায় কি? তিনি বলেন, মৃত্যুকে বেশী করে স্মরণ করা এবং কুরআন পাকের তিলাওয়াত করা।’’ (বায়হাক্বী শরীফ)
১০. কুরআনবিহীন অন্তর বিরান ঘর সদৃশ:عنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رضي الله عنهما، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم الَّذيْ لَيْسَ فيْ جَوْفِهِ شَيءٌ مِنَ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْـخَرِبِ. (رواه الترمذي)
‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তির অন্তরে কুরআনের কোন অংশ রক্ষিত নেই, তা বিরান ঘরের মত।’’ (সুনানে তিরমিযী শরীফ)
১১. কুরআনুল করীম তিলাওয়াতের উপকারিতা:
(১) অন্তরের ময়লা ও অপবিত্রতা দূর হয়।
(২) আল্লাহ তা’আলার মুহাব্বত বৃদ্ধি পায়।
(৩) প্রত্যেক হরফে কমúক্ষে ১০টি করে নেকী পাওয়া যায়, না বুঝে পড়লেও এই নেকী পাওয়া যায়। কেউ যদি বলে, না বুঝে পড়লে কোন লাভ নেই, তাহলে সে ব্যক্তি জাহেল বা বদদ্বীন অথবা উভয়টি।
(৪) ইমান বৃদ্ধি হয়।
(৫) রিযিক এবং হায়াত বৃদ্ধি হয়।
(৬) কুরআন তিলাওয়াতকারীর জন্য কিয়ামতের ময়দানে মহান আল্লাহ পাকের দরবারে পবিত্র কুরআনের সুপারিশের কারণে জান্নাতে যাওয়ার উপায় হয়।
(৭) যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী দূর হয়।
(৮) চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি পায়।
(৯) আল্লাহ পাকের একান্ত নিকটবর্তী হওয়া যায়। কেননা কুরআন তিলাওয়াতের সময় স্বয়ং আল্লাহ পাক তিলাওয়াতকারীর তিলাওয়াত শুনেন।
(১০) কুরআন তিলাওয়াত করার কারণে দুনিয়া-আখিরাত উভয়ে সম্মানিত হয় ইত্যাদি।
১২. কুরআনুল করীম তিলাওয়াতের আদাব:
(১) তিলাওয়াতকারী মনে মনে এই ধারণা করবে যে, মহান আল্লাহ তা‘আলা হুকুম দিচ্ছেন-পড়, দেখি আমার কালামকে কত সুন্দর করে পড়তে পার!
(২) আর শ্রবণকারী অন্তরে এই ধারণা করবে যে, মহান আল্লাহ তা‘আলার পবিত্র কালাম তিলাওয়াত করা হচ্ছে, সুতরাং অত্যন্ত ভক্তি, মুহাব্বত ও মনোযোগ সহকারে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শ্রবণ করা অপরিহার্য।
(৩) অযু অবস্থায় তিলাওয়াত করা। অযু ছাড়াও পড়া যাবে, তবে স্পর্শ করা যাবে না। কিন্তু কারো ওপর গোসল ফরজ হলে স্পর্শও করতে পারবে না, পড়তেও পারবে না।
(৪) পবিত্র জায়গায় বসে তিলাওয়াত করা। মসজিদে তিলাওয়াত করা উত্তম।
(৫) তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করা।
(৬) তিলাওয়াতের আগে তা‘উজ (أَعُوذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ ) এবং তাসমিয়া (بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ) পড়া।
(৭) তারতীলের সাথে পড়া।
(৮) অর্থ অনুধাবন করে তিলাওয়াত করা।
(৯) সুন্দর আওয়াজে ও সুরেলা কণ্ঠে তিলাওয়াত করা।
(১০) দেখে দেখে তিলাওয়াত করা।
(১১) তিলাওয়াতের মাঝে হাসি-তামাশা ও অনর্থক কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা।
(১২) উচ্চস্বরে তিলাওয়াত করা।
(১৩) কারো কষ্টের কারণ হলে উচ্চ স্বরে কুরআন তিলাওয়াত না করা। যেমন নামাযী, ঘুমন্ত বা অসুস্থ ব্যক্তির নিকট বসে তিলাওয়াত না করা।
(১৪) কুরআন তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত আসলে সিজদা করা, তবে অযু থাকা জরুরী।
সর্বক্ষেত্রে সুন্নাতে নববীর অনুসরণই আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য লাভের সর্বাধিক সহজ উপায়।
—ফকীহুল মিল্লাত মুফতী আবদুর রহমান সাহেব (রহ.)
সংগৃহীত